ফাইল চিত্র।
করোনাকালে দুর্গাপুজো নিয়ে জটিলতা যেন আর কাটতে চাইছে না। একে মলমাসের কারণে আশ্বিনের বদলে কার্তিকে পুজো হচ্ছে। এবার বিপাক পুজোর নির্ঘণ্ট নিয়েও। বিশেষ করে যেখানে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে পুজো হয় সেখানে চার দিনের নির্ধারিত সময় সারণী দেখে ঘুম উড়েছে পুরোহিতদের। আবার পুরনো পঞ্জিকা মতেও পুজো নির্ঘণ্ট নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই গৃহস্থ থেকে বারোয়ারি উদ্যোক্তারা।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে এ বার পুজোর সে সূচি নির্দিষ্ট হয়েছে তাতে মহাষ্টমীর অঞ্জলি বা কুমারী পুজো কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কেননা ২৪ অক্টোবর, শনিবার (৭ কার্তিক) অষ্টমী ছেড়ে যাচ্ছে সকাল ৬টা ৫৯ মিনিটে। ফলে সন্ধিপুজো শুরু করতে হবে সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে। অষ্টমীর শেষ চব্বিশ এবং নবমীর প্রথম চব্বিশ মিনিট নিয়ে হয় সন্ধিপুজো। সেই হিসাবে সন্ধিপুজো শেষ হয়ে যাবে সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে। যদিও প্রচলিত অন্য পঞ্জিকা মতে মহাষ্টমী শেষ হচ্ছে সকাল ১১টা ২৪ মিনিটে। তাই সন্ধিপুজো হবে ১১টা থেকে ১১.৪৮ মিনিট পর্যন্ত। পুরোহিতেরা অনেকেই বলছেন, এই হিসাবে অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া গেলেও কুমারী পুজো করা সম্ভব হবে না। কেননা অষ্টমীর পুজো মানেই বিরাট ব্যাপার। সেই সঙ্গে অঞ্জলি, ভোগ সব মিটিয়ে সন্ধিপুজোর আয়োজনের ফাঁকে কুমারী পুজোর সময় বের করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।
এক অবস্থা নবমীতেও। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে ২৫অক্টোবর, রবিবার (৮ কার্তিক) সকাল ৭.৪২ মিনিটে নবমী ছেড়ে যাবে। নবমীতে হোমে পূর্ণাহুতি দিয়ে পুজো সমাপন করাই প্রথা। পুরোহিতেরা অনেকেই বলছেন, এ বার হয়তো একশ আটের বদলে শুধু মাত্র আটটি বেলপাতা দিয়েই হোম সম্পূর্ণ করতে হবে। অন্য পঞ্জিকা মতে অবশ্য বেলা ১১টা ২২ পর্যন্ত নবমী তিথি থাকছে।
সময়ের স্বল্পতা বস্তুত ষষ্ঠীর দিন থেকেই তাড়া করে বেড়াবে সকলকে। ২২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার (৫ কার্তিক) মহাষষ্ঠীর কল্পারম্ভের জন্য বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে সময় নির্দিষ্ট হয়েছে সকাল ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। অন্য পঞ্জিকা মতে ওই সময় কিছুটা বেশি, বেলা ১টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত। ২৩ অক্টোবর, শুক্রবার সপ্তমী থাকছে মাত্র সকাল ৬টা ৫৭ মিনিট পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে নবপত্রিকা পুজো সম্পন্ন করতে হবে। ভিন্ন মতে সময়টা সকাল ১১টা ৫৭ মিনিট পর্যন্ত।
তিথির এই স্বল্প অবস্থান নিয়ে উৎকণ্ঠায় পুরোহিত সমাজ। তাঁদের মধ্যে যাঁরা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত অনুসরণে পুজো করেন তাঁরা বুঝতে পারছেন না কী ভাবে বিষয়টি সামাল দেবেন। এই প্রসঙ্গে নবদ্বীপের পুরোহিত সুশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, “বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে পুজো বহু জায়গাতেই হয়। বেলুড় মঠ বা বিভিন্ন মঠ বা আশ্রমের পুজোয় ওই পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। আমি নিজে যেখানে পুজো করি সেখানেও এই পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়।”
পুরোহিত সমাজ সূত্রে জানা যায়, একটা সময়ে সব পূজার্চনা প্রাচীন পঞ্জিকা মেনেই হত। পরে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, গণিতজ্ঞ নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী প্রমুখ উপলব্ধি করেন, প্রাচীন পঞ্জিকার গণনারীতির কিছু পরিবর্তন দরকার। তাঁরাই প্রাচীন সূর্যসিদ্ধান্তের সংস্কার করে দৃকসিদ্ধান্ত বা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রচলন করেন। কিন্তু বিশুদ্ধসিদ্ধান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব কিছু সামলাবেন কী করে? সুশান্তবাবুরা বলছেন “বরমেকা আহুতি কালে, না কালে লক্ষকোটয়।” যার অর্থ, বরং সময়ে একটি মাত্র আহুতি দাও, কিন্তু অসময়ে লক্ষকোটিও আহুতিও নিষ্ফল। অর্থাৎ সেই একশো আটের বদলে আটেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে হয়তো এ বার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy