শুনশান বাজার। ফাইল চিত্র
হাতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ। ঠিক একুশ দিনের মাথায় দেবীর বোধন। দুর্গাপুজোর আগে এ সময়ে দোকানে-বাজারে তুমুল ব্যস্ততা থাকবে, নাওয়া-খাওয়ার সময় পাবেন না ব্যবসায়ীরা, ক্রেতার চাপে রাত বাড়লেও দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করা যাবে না— এমন ছবিই স্বাভাবিক। কিন্তু কোথায় কী!
চলতি মরসুমে বাজারে তেমন কেনাবেচার তোড়জোড় এখনও চোখে পড়ছে না। শুকনো মুখে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকা দোকানদার হিসেব কষছেন কী করে মেটাবেন মহাজনের দেনা। এখনও পর্যন্ত এ বারের পুজোর বাজারের ছবি এটাই।
মাস পয়লায় কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ বা রানাঘাটের হাতেগোনা কিছু বড় দোকান বা ঝাঁ-চকচকে শপিংমলে সন্ধেবেলায় শহুরে ভিড় জমছে। তবে মাঝারি, ছোট কিংবা ফুটপাতের দোকানের ছবিটা বেমালুম উল্টো। সকাল থেকে দল বেঁধে কেনাকাটা করতে আসা গ্রামীণ মানুষ অনুপস্থিত এই পুজোর বাজারে। অন্য বার এই সময়ে পুজোর জিনিসের ফাইনাল স্টক করে ফেলেন ছোট বা মাঝারি বিক্রেতারা। কিন্তু এ বার তাঁদের অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত। রথের পর থেকে যে মালপত্র তোলা হয়েছে, তার সামান্যই বিকিয়েছে। এই অবস্থায় আবার নতুন করে মাল তোলার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউ-ই। যদি এমনই চলে বাজার, তা হলে কী করে ঋণের বোঝা সামলাবেন? স্বভাবতই ব্যবসায় পুজোর গন্ধ একেবারেই অনুপস্থিত। কেন বাজারের এই হাল? কেনই বা মানুষ পুজোর বাজারে আসছেন না?
কারণ হিসাবে উঠে আসছে নানা বিষয়। তবে, কৃষিপ্রধান জেলা নদিয়ার পুজো-বাণিজ্যের এই বেহাল দশার জন্য বৃষ্টির ঘাটতিকে দায়ী করছেন সবাই। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “নবদ্বীপ বলে নয়, গোটা নদিয়ায় পুজোর বাজারের একটা বড় অংশ গ্রামীণ ক্রেতাদের উপর নির্ভর করে। অথচ, চাষিরা এই বছর জলের অভাবে পাট পচাতেই পারেননি। তাঁরা পুজোর বাজারে আসবেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। আমাদের অনুমান বলছে, এ বার বাজার খুব ভাল
হবে না।’’ জানালেন, যাঁরা জানতে চেয়েছেন, তাঁদেরকে কম করে জিনিস তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। নিরঞ্জন বলেন, ‘‘মাস মাইনে পেয়ে চাকরিজীবীরা কিছু দোকানে কেনাকাটা করছেন ঠিকই। কিন্তু সে তো মোট ক্রেতার অতি সামান্য অংশ। বাকিরা বাজারে না এলে ব্যবসায়ীরা মার খাবেন।”
শুধু পাট নয়, আমনের অবস্থাও তথৈবচ। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে চাষি বাধ্য হয়েছেন বিলম্বে আমন ধান বুনতে। প্রকৃতির এই খামখেয়ালি আচরণ সার্বিক ভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে দিয়েছে।
মায়াপুরের চাষি সুফল হালদার বলছেন, “আমরা ঋণ নিয়ে চাষ করি। পাট মরসুমের শেষে ফসল বেচে, মহাজনের টাকা শোধ করার পর যা থাকে, তা দিয়ে পুজোর বাজার বা অন্য প্রয়োজন মেটাই। কিন্তু এই নিয়ম আর বজায় রাখা যাছে না। হয় বৃষ্টি বেশি, নয় তো একেবারেই কম। এ বার যেমন পাট পচাতেই পারেননি অনেকে। এই অবস্থায় মহাজনের টাকা শোধ করব, না পুজোর বাজার?” ়
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টির সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা জানান, জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে কয়েক বছর ধরে বাজারের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। লোকের হাতে নগদ টাকা নেই। তিনি বলেন, “জিএসটির চাপে প্রায় সব ধরনের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ফলে, বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কমে গিয়েছে। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে জিনিসের দাম বেড়েছে।’’
নতুন প্রজন্ম অনলাইনে কেনাকাটায় স্বচ্ছন্দ। বাজারে ক্রেতা এবং টাকা— দুই-ই নেই। তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ী মহলের আশা, মহালয়া নাগাদ এই ঝিম-ধরা ভাব কেটে যাবে। চেনা ভিড় ফিরবে
পুজোর বাজারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy