Advertisement
E-Paper

TMC: অসীম ছেঁটে তাজ বাঁচাতে মরিয়া তৃণমূল

কৃষ্ণনগরে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ক্ষমতা আবর্তিত হয়েছে অসীম সাহাকে ঘিরে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৬:২৪
Share
Save

তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের জেরে কৃষ্ণনগর শহরে দলের শক্তিকেন্দ্রের পুরোপুরি পরিবর্তন ঘটে গেল। দীর্ঘদিন ধরে শহরের বুকে দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা আসীম সাহাদের ক্ষমতা খর্ব করা হল। সেই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হল তাঁদের বিরোধী শিবিরের হাতে।

সেই সঙ্গেই কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীতে এমন মুখ নিয়ে আসা হল যাঁদের সঙ্গে কোনও দিনই রাজনীতির সরাসরি যোগ ছিল না। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এক ঢিলে দুই পাখি মারার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহাকে সরিয়ে মানুষের প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ যেমন প্রশমিত করতে চাওয়া হয়েছে, তেমনই নরেশ দাসদের মতো অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সামনে এনে তৃণমূল সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

কৃষ্ণনগরে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ক্ষমতা আবর্তিত হয়েছে অসীম সাহাকে ঘিরে। তিনি চার বারের কাউন্সিলর, দু’বারের উপ-পুরপ্রধান ও দু’বারের পুরপ্রধান। পুরসভার অন্দরে তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করে এসেছেন এত দিন। বিভিন্ন সময়ে কাউন্সিলরদের কেউ কেউ বিদ্রোহ করলেও তা বিশেষ ধোপে টেকেনি। বার বার জেলা সভাপতি পরিবর্তন হলেও অসীম সাহার দাপট থেকে গিয়েছে একই রকম। গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর শহরে তৃণমূলের ভরাডুবির পর অবশ্য তাঁর উপরে বেজায় চটেছিলেন কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের নব নির্বাচিত সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মহুয়া জেলা সভানেত্রী হওয়ার পরেও সেই দূরত্ব ঘোচেনি। দলের অন্দরে অনেকের ধারণা, সেই কারণেই বছরখানেক আগে অসীম-ঘনিষ্ঠ শশীগোপাল সরকারকে সরিয়ে শহর সভাপতি করা হয় অসীম-বিরোধী বলে পরিচিত শিবনাথ চৌধুরীকে। নানা বিষয়ে তাঁদের বিবাদ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। বিশেষ সিআইডি অফিসার সেজে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে রাধারাণী গ্রেফতার হওয়ার পরে। দলের বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদা মঞ্চে অনুগামীদের নিয়ে পালন করতে দেখা যায় দু’জনকেই। গত বিধানসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীর হয়ে তেমন ভাবে প্রচার না করার অভিযোগও উঠেছিল অসীমের বিরুদ্ধে। সে সবেরই কি ফল ভোগ করতে হল? অসীম অবশ্য সে সব প্রসঙ্গে না গিয়ে বলছেন, “আমি দলের একজন কর্মী। আমাকে দল যে দায়িত্ব দেবে, যতটা দায়িত্ব দেবে, আমি তা-ই মাথা পেতে নেব।”

শুধু সরিয়ে দেওয়াই নয়, সব দিক দিয়ে কার্যত ঘিরে ফেলা হয়েছে অসীম সাহাকে। কৃষ্ণনগর শহর সভাপতি করা হয়েছে তাঁর কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর শিশির কর্মকারকে। আর পুর প্রশাসকমণ্ডলী থেকে তাঁকে সরিয়ে যাকে নিয়ে আসা হয়েছে, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সেই প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রদীপ দত্তও তাঁর চরম বিরোধী বলে পরিচিত। যদিও সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে প্রদীপ বলছেন, “অন্য কোনও কিছু নয়। আমার একমাত্র লক্ষ্য শহরের মানুষকে পর্যাপ্ত পরিষেবা দেওয়া।”

২০১৩ সালে শেষ পুর নির্বাচনে কৃষ্ণনগরে ২২টি আসনে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। দুটো আসনে জয়ী হন নির্দল প্রার্থীরা। ফল বেরনোর দিনই তাঁরা অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু তার পর দু’টি লোকসভা ও দু’টি বিধানসভা ভোটে জোর ধাক্কা খায় দল। বিগত দুটি লোকসভা নির্বাচনেই এক মাত্র ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া সর্বত্র পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই ১৮ নম্বর বাদে আর মাত্র সাতটি ওয়ার্ডে সামান্য এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনেও শুধু মাত্র ১৮ ও ১৯ ওয়ার্ডে এগিয়ে থেকেছে তারা। দলেরই অনেকের ধারণা, এই সব শোচনীয় ফলের পিছনে পুরসভার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কাজ করেছে। ফলে আবার যখন পুরভোট আসন্ন, তখন খোলনলচে বদলে দেওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন নেতৃত্ব।

সেই সঙ্গে পুর প্রশাসকমণ্ডলীতে নিয়ে আসা হয়েছে এমন লোকেদের যাঁরা কোনও দিন সে ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন করা হয়েছে শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নরেশ দাসকে। অনেকের ধারণা, ভবিষ্যতে তাঁর কাছ থেকে নানা ভাবে উপকৃত হতে পারে তৃণমূল। নরেশ অবশ্য বলছেন, “রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে পরিষেবা দেওয়াই আমার এখন একমাত্র লক্ষ্য। অন্য কিছু মাথায় রাখতে চাই না।”

নরেশের সঙ্গে বোর্ডে আনা হয়েছে আইনজীবী রমেন মুখোপাধ্যায় ও চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে, যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা আছে শহরের মানুষের মধ্যে। একমাত্র রাজনৈতিক মুখ প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রদীপ দত্ত ওরফে মলয়। তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি জয়ন্ত সাহার ব্যাখ্যা, “দলকে আরও শক্তিশালী করতে ও মানুষের কাছে পুর-পরিষেবা আরও ভাল করে পৌঁছে দিতেই পদক্ষেপ করা হয়েছে।”

TMC Congress

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।