Advertisement
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
Price Hike

Price hike: পাতিলেবুর গরমেই ঘাম ছুটছে সকলের

পাতিলেবুর দাম বর্তমানে কার্যত সাধারণের নাগালের বাইরে। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারের অন্যতম দামী আনাজ হয়ে রয়েছে সে।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ০৫:২৮
Share: Save:

এই গরমে সান স্ট্রোক বা হিট স্ট্রোক ঠেকাতে সব চিকিৎসকের একই পরামর্শ— নুন-লেবুর সরবত খান। ভাতের পাতে লেবু এই সময় থাকতেই হবে। মেনু ডাল কিংবা ঝোল যাই হোক না কেন। ও দিকে, বৈশাখ মাস পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিয়েবাড়ি। বিরিয়ানি কিংবা মাটন ভোজের পাতে যাই পড়ুক, পাতিলেবু আর বিট নুন ছড়ানো স্যালাডের তুমুল চাহিদা। এ ছাড়া, মেদ ঝরানো থেকে ত্বকের যত্ন নেওয়া কিংবা করোনায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো— সব কিছুর জন্য পাতিলেবুর চাহিদা ঘরে ঘরে।

এ হেন পাতিলেবুর দাম বর্তমানে কার্যত সাধারণের নাগালের বাইরে। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারের অন্যতম দামী আনাজ হয়ে রয়েছে সে। তাই সকলের নজর এখন পাতিলেবুর দামের কমা-বাড়ার দিকেই।

এমনিতে করোনার পর থেকে ভিটামিন সি-এর অন্যতম উৎস হিসাবে পাতিলেবু বিনে হেঁসেল অন্ধকার দেখছেন সবাই। কিন্তু গরম পড়তেই অস্বাভাবিক আকার নিয়েছে লেবুর চাহিদা। সময় বুঝে টান পড়েছে জোগানে। শরবত থেকে স্যালাড, বিরিয়ানি থেকে পান্তা— সর্বব্যাপ্ত পাতিলেবু। এবারে তার ফলন চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট কম হওয়ায় হু-হু করে বাড়ছে লেবুর দাম। পনেরো দিন আগে নদিয়ার বাজারে এক একটি পাতিলেবু বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা দামে। যা শীতে নতুন ওঠা কমলালেবুকেও লজ্জা দেবে। এই মুহূর্তে অবশ্য কিছুটা কমেছে দাম।

নবদ্বীপ বাজারের খুচরো বিক্রেতা উত্তম ঘোষ বলেন, “সাইজ ভাল, রস আছে এমন পাতিলেবু ৭ টাকায় প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে। ৫ টাকা জোড়াও আছে, তবে সে সব লেবু নামেই। রস মিলবে কিনা গ্যারান্টি নেই।”

কেউ কেউ মার্বেলের চেয়ে সামান্য বড় পাতিলেবু ৫ টাকায় তিনটে বিক্রি করছেন বটে। তবে সে লেবু দেখেই বোঝা যাচ্ছে অপুষ্ট। হয় জলের অভাবে খসে পড়েছে, নয় বাজারে চাহিদা দেখে চাষি জোর করে ছিড়ে নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি, গন্ধরাজ লেবুরও বেশ চড়া দাম। ১০ টাকার নীচে মিলছে না একটি গন্ধরাজ। সে ভাবে এখনও আসেনি কাগজি লেবু। দু-একজন অপরিণত কাগজি লেবু ৫-৬ টাকা জোড়ায় বিক্রি করছেন।

চাষি এবং কৃষি বিশেষজ্ঞরা এর জন্য আবহাওয়াকেই দায়ী করছেন। লেবু গাছ শুকনো মাটি পছন্দ করে। অথচ, গোটা শীতকালে এবার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে, লেবু গাছে ফুল ধরার সময়ে আবহাওয়া ছিল বিরূপ। তার প্রভাবে গাছে এমন ফলন কম হয়েছে বলে মনে করছেন লেবু চাষি দীপক কুমার খাঁ।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে শীত থাকার কারণে এবার লেবুর সাইজও ভাল হয়নি। তাই বাজারে স্থানীয় লেবুর জোগান নেই বললেই চলে। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর লেবুই এখন ভরসা। তবে কিছু দিনের মধ্যে দেশি লেবু মিলবে।”

অন্য দিকে, কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “প্রায় দুই মাস বৃষ্টি নেই। মাটি শুকিয়ে গিয়েছে। গাছ রস পাচ্ছে না। লেবু পুষ্ট হচ্ছে না। এখনও সময় লাগবে।”

যথারীতি এর ফলভোগ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। গৃহস্থ বাড়ি থেকে খাদ্যের ব্যবসায়, হোটেল, রেস্তরাঁ, ফুচকা, লেবু চা— সবই বর্তমানে মহার্ঘ হয়েছে লেবুর কারণে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই কেউ এখনই দাম বাড়াতে পারছেন না। ফলে, ক্রমশ কমছে লাভের পরিমাণ।

রেস্তরাঁ মালিক শ্যামল মল্লিক বলেন, “আমাদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। জ্বালানি থেকে রান্নার তেল, চিকেন সবেরই দাম বাড়ছে। ক’দিন আগে ১০ টাকায় লেবু কিনেছি, যা কল্পনাও করা যায় না। ১৭০ টাকার মটন বিরিয়ানি এখনই ২০০ টাকা করা দরকার। পারছি কই! প্রতি দিনের লাভ ৫০-৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে।”

এখনও পর্যন্ত হোটেলে লেবু দেওয়া বন্ধ করেননি রাজকুমার ঘোষ। শ’ হিসাবে ১৫০-২০০ টাকার লেবু কিনেছেন ৭৫০-৮০০ টাকায়। বুধবার অবশ্য ৬০০ টাকায় কিনেছেন। তাঁর কথায়, “মানুষ গরমের দুপুরে খেতে বসে মাংস বা ডালের সঙ্গে লেবু একটা বেশি নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা সে ভাবেই আমাদের ক্ষতি স্বীকার করেও তাঁদের লেবু দিচ্ছি। না হলে টিকতে পারব না। তবে আমাদের লাভ কমছে।”

ক্রেতা কমেছে শরবতের। এক বিক্রেতা রাজু পাল বলেন, “আগে দিনে গড়ে ২৫০ গ্লাস শরবত বিক্রি করতাম। এখন শ’দেড়েক বড়জোর। দশ টাকা গ্লাস অনেকের কাছেই বেশ দামি। কিন্তু আমাদেরও কিছু করার নেই।” ছোট মাটির ভাঁড় বা কাগজের কাপে লেবু চা ৫ টাকা। নিরুপায় হয়ে তাতেই চুমুক দিতে হচ্ছে। বাজারের পূর্বাভাস— পাতিলেবুর গরম এখন চলবেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Price Hike Lemon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy