Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Letter

শ্রীচরণেষু… বিজয়ার প্রণাম নেবেন

যদিও বিজয়া দশমী যথা নিয়মেই আসে ফি বছর। বিজয়ার প্রণাম, শুভেচ্ছা সবই জানানো হয়।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৪৬
Share: Save:

বিজয়ার পর দিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পরে ডাক পড়ত বাবার ঘরে। এক গোছা পোস্টকার্ড নিয়ে বসতেন বাবা। সামনের দিকে বড় অংশে লিখে বছর দশেকের ছেলের হাতে পোস্টকার্ড এগিয়ে দিয়ে দিয়ে বলতেন ‘তুমি এখানে লেখ’। আর বাধ্য বালক বাবার পাশে বসে সেই পোস্টকার্ডের পিছনের ছোট অংশে আঁকাবাঁকা অক্ষরে লিখত “শ্রীচরণেষু… আপনি আমার শুভ বিজয়ার প্রণাম নেবেন।”

‘শুভ বিজয়া’ শব্দের আগে একটা চন্দ্রবিন্দু দিতে হত। একতাড়া চিঠিতে ওইটুকু লিখতে কখন যে হেমন্তের দুপুর, বিকেল ফুরিয়ে যেত বুঝতে পারত না ছোট্ট ছেলেটি। সে দিনের সেই বালক, আটাত্তর পার করা অয়ন সেনশর্মা এখন বেশ বুঝতে পারেন কেমন করে উৎসব শেষের দুপুরের সঙ্গেই ফুরিয়ে গিয়েছেন বিজয়ার চিঠির প্রেরক এবং প্রাপকেরা। চিঠি নিজেই এখন অতীত।

যদিও বিজয়া দশমী যথা নিয়মেই আসে ফি বছর। বিজয়ার প্রণাম, শুভেচ্ছা সবই জানানো হয়। তবে সে জন্য চিঠির খোঁজ পড়ে না। একটা স্মার্টফোনই যথেষ্ট। ডাক বিভাগ এখনও পোস্টকার্ড চালু রেখেছে। কিন্তু তার ব্যবহার এতই কমে গিয়েছে যে নতুন প্রজন্ম প্রায় জানেই না পোস্টকার্ডকে। শুধু বর্ষীয়ান নাগরিকদের অনেকের পুরনো চিঠির ঝাঁপিতে রয়ে গিয়েছে অতীতের স্মৃতিমাখা হাতের লেখা বিজয়ার চিঠি। ‘শ্রীচরণেষু’ বা ‘স্নেহাস্পদ’ সম্ভাষণে লেখা পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ড লেটার। বিজয়া দশমীর পর পরই সেই সব চিঠি খুলে ‘ডাউন মেমোরি লেন’ বরাবর হেঁটে চলেন নবদ্বীপের অয়ন সেনশর্মা, মাজদিয়ার সুজিতকুমার রায়েরা।

১৯৬২ সালে তৎকালীন নবদ্বীপের সাংসদ ইলা পালচৌধুরীর পাঠানো বিজয়ার শুভেচ্ছাবার্তা লেখা পোস্টকার্ডটি হাত নিয়ে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছিলেন নবদ্বীপ অ্যাথলেটিক ক্লাবের সহ-সভাপতি অয়ন সেনশর্মা। পুরনো স্মৃতিতে ডুব দিয়ে তিনি বলেন, “সে সময়ে সবাই এ ভাবেই শুভ বিজয়ার প্রণাম এবং শুভেচ্ছা পাঠাতেন। পুজোর কেনাকাটার সঙ্গে বাধ্যতামূলক ছিল পোস্টকার্ড। পোস্ট অফিসগুলোতে লম্বা লাইন পড়ত। কতদিন আগেকার সেই চিঠি হাতে নিয়ে এখনও যে উষ্ণতার ছোঁয়া পাই, হোয়াটসঅ্যাপ বা ভিডিয়ো কলে তার বিন্দুমাত্র পাই না। নিজে হাতে লিখে কেউ আশীর্বাদ করছেন তার আন্তরিকতাই অন্য রকম।”

সুজিতকুমার রায়ের সংগ্রহে থাকা বিজয়ার চিঠির মধ্যে সবচেয়ে পুরনোটি ২৯/১১/১৯৫৬ সালে লেখা। প্রেরক স্বামী মাধবানন্দ, প্রাপক সুধীরঞ্জন রায়। সম্পর্কে সুজিত বাবুর জেঠামশাই। আছে ১৯৬০, ১৯৭৫ সালের চিঠি। বলেন, “জেঠামশাই ছিলেন স্বামী প্রণবানন্দের মন্ত্রশিষ্য। তাঁকে অন্য মহারাজেরা শুভেচ্ছা পাঠাতেন। ১৯৯১ সালে সাহিত্যিক শুদ্ধসত্ত্ব বসু বা ২০০১ সালে অধ্যাপক ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তীর আমাকে পাঠানো বিজয়ার চিঠি রয়েছে। আমি নিজে শেষ চিঠি লিখেছি চার বছর আগে। এখন আর ও সব দরকার হয় না।”

নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেবের মতে, “সাধারণ চিঠি নিয়ে ডাক বিভাগের আগ্রহ বিশেষ আছে বলে মনে হয় না। স্পিড পোস্ট বা রেজিস্টার্ড চিঠি না পাঠালে সে কবে পৌঁছবে তার কোনও ঠিক নেই। ফলে ইচ্ছা থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাবে চিঠি লেখার সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গেল।”

অন্য বিষয়গুলি:

Letter Bijaya Dashami Post Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy