Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

ভূগর্ভ থেকে বিষ মিশছে শোধিত জলে?

সাধের শিল্পনগরী কল্যাণী গড়ে তোলার সময়ে বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ন ছিল, দিগ্বিদিক থেকে গুণী মানুষেরা এসে এখানে বসত করবেন। শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে, এখন বরং শিক্ষানগরী হিসেবে নতুন করে উত্থান হয়েছে এই শহরের। কিন্তু পুরবাসী যে জল খান, তাতেই মিশে নেই তো আর্সেনিকের বিষ? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।  বিভিন্ন প্রকল্পে শোধিত জলও কতটা বিষমুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, সেই জলে মেশানো হচ্ছে ভূগর্ভের জল! অভিযোগ, বহাল তবিয়তে বুস্টিং পাম্প চালিয়ে জল তোলা হচ্ছে মাটির তলা থেকে

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৮:২০
Share: Save:

দিন-দিন বেড়ে যাচ্ছে কল্যাণীর কলেবর। এক সময়ের পঞ্চায়েত এলাকাগুলি ক্রমশ পুরসভার মধ্যে চলে আসছে। শহরের বি-ব্লক ফ্ল্যাটে ভরে গিয়েছে। পিছিয়ে নেই এ ব্লকও। লাফিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। ফলে একাধিক জল প্রকল্পের জলও এখন আর গোটা শহরের তেষ্টা মেটাতে পারছে না।

শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ রথতলার মানুষ তো কার্যত জল প্রকল্পের কোনও সুবিধাই পাচ্ছেন না। আজও সেখানকার মানুষের প্রধান ভরসা স্থানীয় ওয়ার্ড অফিস-সংলগ্ন বুস্টার পাম্পের মাধ্যমে তোলা ভূগর্ভের জল। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, আয়রনে ভরা সেই জল যাঁরা ব্যবহার করছেন তাঁদের জামাকাপড়, বাসনপত্র হলুদ হয়ে গিয়েছে। সেই জলে আর্সেনিক রয়েছে কিনা, বা থাকলেও তার পরিমাপ কত, সাম্প্রতিক অতীতে কেউ তা খতিয়ে দেখেনি বলে অভিযোগ।

বিভিন্ন প্রকল্পে শোধিত জলও কতটা বিষমুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, সেই জলে মেশানো হচ্ছে ভূগর্ভের জল! অভিযোগ, বহাল তবিয়তে বুস্টিং পাম্প চালিয়ে জল তোলা হচ্ছে মাটির তলা থেকে। যে সব অঞ্চলে এই কাজ হচ্ছে সেগুলি হল, মাঝেরচর, বি-১, বি-২, বুদ্ধপার্ক, রথতলা, সেন্ট্রাল পার্ক, ২ নম্বর বাজার, বোটপার্ক, নিমতলা, বি-১০, পুরসভা ও পিডব্লিউডি-র সামনে, সতীমার মন্দির, বারো হাত, শিখা ফ্যাক্টরি, মেডিক্যাল কলেজ, এ-২ এর মাঠ, জুলিয়েন ডে স্কুল সংলগ্ন, সীমান্ত এলাকা, ১৪ নম্বর বাজার, ইন্ডিয়ান ওয়েলের সামনের এলাকা। এই জলেও আয়রন পুরোমাত্রায় রয়েছে। বিজ্ঞানীরা আর্সেনিকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অথচ, জল প্রকল্পের শোধিত জলের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে সেই জল! কেন?

কারণ, শোধিত জলের যা বেগ তাতে বাড়ির ছাদের উপরে ট্যাঙ্কে জল উঠতে পারে না। কল দিয়েও সরু সুতোর মতো জল পড়ে। বুস্টিং পাম্পের মাধ্যমে মাটির তলা থেকে তোলা জল পাইপে গিয়ে প্রকল্পের জলের গতি বাড়িয়ে দেয়। ফলে জল পড়ে মোটা হয়ে। সহজে তা দোতলা-তিনতলাতেও ওঠে। পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (জল) বলরাম মাঝি বলেন, ‘‘শহর দ্রুত বাড়ছে। তাই জলের চাহিদা পূরণ করতে শোধিত জলে ভূগর্ভের জল মেশানো ছাড়া গতি নেই। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তিনি ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। ওই টাকায় দৈনিক ১০ মেগা গ্যালন জল শোধনে সক্ষম আর একটি জল প্রকল্প তৈরি হবে।’’

কয়েক বছর আগে কল্যাণী শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে পাঠানো হয়। ২৩৯টি টিউবওয়েলের জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ১৫১টিতেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের অস্তিত্ব মিলেছিল। ওই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শহরের একাধিক এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে রয়েছে আর্সেনিক। শহরের অনেক নাগরিকের মূত্রও পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানেও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক মিলেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষকে আর্সেনিক দ্রুত কাবু করতে সক্ষম। কল্যাণীতে এখন সে ভাবে ভয়ঙ্কর অপুষ্টিতে ভোগা মানুষ নেই। ফলে অনেকেই শরীরে বিষ ঢুকলেও তার বহিঃপ্রকাশ তাড়াতাড়ি হচ্ছে না। মূত্র পরীক্ষার রিপোর্টই প্রমাণ করছে, মানুষের শরীরে বিষ ঢুকেছে। একটু দেরিতে হলেও তা গুরুতর অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Project Arsenic Refined water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy