হারেজ শেখের দাদু ( মায়ের বাবা) হায়দার শেখ। নদিয়ার মায়াপুরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
জঙ্গি-যোগের কারণে ধৃত মায়াপুরের হারেজ শেখ যতই ‘পাগলাটে’ বলে এলাকায় পরিচিত হোক, একাধিক জরুরি প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
মায়াপুরের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা, বছর সাতাশের হারেজকে মঙ্গলবার হাওড়া থেকে পাকড়াও করে এসটিএফ। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হারেজ বাড়ি থেকে বিশেষ বেরোত না। তাকে কোনও ভারী কাজ করতেও দেওয়া হত না। হাওড়ার একটি কারখানায় গেঞ্জি ভাঁজ করার কাজ পেয়েছে জানিয়ে সোমবার সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। মঙ্গলবার তার গ্রেফতারির খবর আসে।
হারেজের এই গতিবিধি নিয়েই বুধবার এলাকায় নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। মুখচোরা, বন্ধুবান্ধবহীন হারেজের জঙ্গি-যোগ নিয়ে এ দিন নানা রকম অনুমান নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে রাজমিস্ত্রি-প্রধান মোল্লাপাড়া। পাড়ার অনেকেই এ দিন কাজে যাননি।
প্রথম প্রশ্ন: হারেজকে হাওড়ার গেঞ্জি কারখানায় কাজ দেওয়ার জন্য কে ডেকেছিল? সাধারণত বাড়ির বাইরে না বেরনো হারেজের সঙ্গে তার যোগাযোগ হল কী ভাবে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: পাড়া-পড়শিদের অনেকেই যাকে একবাক্যে ‘পাগল’ বা ‘পাগলাটে’ বলছে তাকে একা হাওড়ার গেঞ্জি কারখানায় কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে ছেড়ে দেওয়া হল কেন?
তৃতীয় প্রশ্ন: হারেজ যদি কোনও গোলমালে জড়িতই না থাকে, এসটিএফ তার পিছনে পড়ল কেন? তারা জানলই বা কী করে যে সেই দিনই হারেজ হাওড়ায় যাচ্ছে? তাকে চিহ্নিত করে ধরলই বা কী করে?
চতুর্থ প্রশ্ন: হারেজকে কাজের টোপ দিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়নি তো?
বর্তমানে কল্যাণীতে পড়াশোনা করেন, সেখানেই থাকেন হারেজের ভাই মারেজ শেখ। বুধবার তিনি বলেন, "বিগত কয়েক বছর ধরেই দাদা মানসিক ভাবে অসুস্থ। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ ওকে প্রভাবিত করতেই পারে।" সেই সঙ্গেই তিনি জানান, দু’বছর যাবৎ তিনি সে ভাবে বাড়ি যান না। গত ইদে দু'দিনের জন্য গিয়েছিলেন। তাই দাদার খবর সে ভাবে রাখা হয়নি তার। তিন-চার দিন আগে এক বার ফোন করেছিলেন, কিন্তু হারেজের ফোন বন্ধ ছিল।
তবে হারেজের যে অনেকটা সময় মোবাইল নিয়েই কাটত, তা পরিবারের লোকেদের কথাতেই স্পষ্ট। বাবা ছেড়ে চলে যাওয়া ইস্তক মোল্লাপাড়ায় সে মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতেই থাকত। তার মা-ও মানসিক ভাবে ‘সুস্থ’ নন। দাদু হায়দার শেখ বলেন, “হারেজ তো মোবাইলেই সারাক্ষণ বাড়ির ছোটদের সঙ্গে কার্টুন দেখত। আমি বলতাম, ‘সারা দিন কী কার্টুন দেখিস? যা ঘাস কেটে নিয়ে আয়’। তখন যেত।”
হায়দারের ধারণা, ওই মোবাইলে ফোন করেই কেউ হারেজকে গেঞ্জি কারখানায় কাজের কথা বলেছিল। তাঁর কথায়, “আমি ওকে বলি, তুই আবার কী কাজ করবি? কে তোকে কাজ দিচ্ছে? ও বলেছিল, হালকা কাজ। মোবাইলে কার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সে তো আমরা জানি না!” হায়দারের পড়শি আজিবুল শেখও বলেন, “ও তো সুস্থই নয়, কী কাজ করবে? কেউ ফাঁসিয়ে দিয়েছে।” কারও-কারও ধারণা, এসটিএফের তরফেই ওই ফোন করা হয়েছিল। কাজের অছিলায় দূরে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় যাতে গ্রামে কোনও অশান্তি না হয়।
মাঝেরপাড়ায় হারেজ শেখদের বাড়ির গলিতে ঢোকার আগে মোড়ের মাথায় জটলা। সেখানে হাজির কিছু লোকের দাবি, রবিবার খুব ভোরে গ্রামে দু’টি গাড়ি এসেছিল। পুলিশের মতো পোশাক পরা কয়েক জন নেমে মোবাইলে গ্রামের বড় মসজিদের ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছে। যেখান দাঁড়িয়ে তারা মসজিদের ছবি তুলছিল বলে দাবি, সেখান থেকে সামান্য দূরেই হারেজের মামার বাড়ি।
ওই ভোরে যে দু’এক জন ঘটনাটা দেখেছিলেন তাঁরা কেউই অবশ্য বলতে পারেননি কারা এসেছিল, কেন এসেছিল। হারেজের দাদু হায়দার শেখ বলেন, “ আমি নিজে দেখিনি, কিন্তু এ কথা শুনেছি। এমনও হতে পারে যে পুলিশ কারও খোঁজে মোবাইলের লোকেশন ধরে এসেছিল, তার পরে আর খুঁজে পায়নি। তাই মসজিদের ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিল।” এ দিন দুর্গাপুরে গিয়েও হারেজের দেখা পাননি তাঁরা। হায়দার বলেন, “আগামিকাল আমাদের কাঁকসায় যেতে বলেছে। সেখানে ওর সঙ্গে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy