গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
কৃষ্ণনগরে ছাত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এ বার এক তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করল পুলিশ। সূত্রের খবর, ওই তরুণী মৃতা এবং তাঁর প্রেমিকের ‘কমন ফ্রেন্ড’। কিন্তু পরিচয় মাত্র এক দিনের। সেই আলাপও আবার দুর্গাপুজোর কার্নিভালে। কিন্তু ওইটুকু পরিচয়ের পর কী ভাবে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে তাঁর ‘তুইতোকারি’র সম্পর্ক হল, কেনই বা ছাত্রীর হোয়াটস্অ্যাপ স্টেটাস দেখে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করে ছাত্রীর প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, তদন্তের স্বার্থে ধৃত মূল অভিযুক্ত এবং ওই ‘রহস্যময়ী’কে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ, ওই তরুণীর দেওয়া বেশ কিছু তথ্য বিভ্রান্তিকর।
কৃষ্ণনগরের ওই ছাত্রী গত মঙ্গলবার রাতে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস দেন। তাতে নাকি লেখা ছিল, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’’ (আনন্দবাজার অনলাইন এর সত্যতা যাচাই করেনি)। আবার ওই একই বার্তা নাকি মৃত্যুর আগের রাতে মায়ের মোবাইলে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ফেসবুক পোস্টের বয়ানও ছিল একই। যে তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, ওই হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস দেখে তিনি তরুণীর প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, কী ঘটেছে। কিন্তু ওই তরুণীর দেওয়া তথ্যগুলি পরস্পরবিরোধী। কারণ, তিনি নিজেই পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে ওই ছাত্রী এবং প্রেমিকের আলাপ মাত্র এক দিনের। আবার ওই এক দিনের আলাপে তিনি জানতেন যে যুবকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছিলেন ওই ছাত্রী!
উল্লেখ্য, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন, বুধবার সকালে নদিয়া জেলা স্টেডিয়ামের পাঁচিলের ধারে দুর্গাপুজোর ফাঁকা মণ্ডপে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর আধপোড়া দেহ উদ্ধার হয়। মায়ের দাবি, লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে বেরিয়েছিলেন মেয়ে। বেরিয়ে ফোন করে জানিয়েছিলেন, ওই যুবকের (প্রেমিক) সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে রেস্তরাঁয় খেতে যাচ্ছেন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরেননি মেয়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন রাতে অভিযুক্তের সঙ্গে ওই তরুণীর একাধিক বার ফোনে কথাবার্তা হয়। অভিযুক্ত এবং মৃতা তাঁর পরিচিত ছিলেন বলে স্বীকার করলেও ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন ওই তরুণী। পুলিশের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪৫ থেকে ১১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত অভিযুক্তের সঙ্গে কার কার কথা হয়েছে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকেই ওই তরুণীর খোঁজ মেলে।
শুক্রবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তরুণীকে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুই আধিকারিক। সেখানে তরুণী জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে তাঁর সঙ্গে ছাত্রীর কথা হয়েছিল। পরের দিন তাঁকে বাড়িতে নিমন্ত্রণও করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত এবং মৃতার সঙ্গে আমার মাত্র এক দিনের আলাপ ছিল। দুর্গাপূজার কার্নিভালে আমার সঙ্গে প্রথমে পরিচয় হয় ওই তরুণীর। ওঁর প্রেমিকের সঙ্গে আমার আলাপ সেই সূত্রেই। কার্নিভালের দিন কদমতলা ঘাটে তরুণীকে নিতে এসেছিলেন তাঁর প্রেমিক। সেখানেই কথাবার্তা বলেছিলাম।’’ সেই তরুণীই আবার জানাচ্ছেন, গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রীর হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস দেখে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনশট নিয়েছিলেন তিনি। তার পর সেটা তাঁর প্রেমিককে পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিলেন কী হয়েছে। কিন্তু ‘বান্ধবী’কে কেন ফোন করেননি? তরুণীর দাবি, ‘‘আমি তিন-চার বার ফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোন তোলেনি। তাই স্টেটাসের স্ক্রিনশট নিয়ে ওর প্রেমিককে পাঠাই।’’ তাতে কী প্রতিক্রিয়া ছিল মৃতার প্রেমিকের? তরুণীর কথায়, ‘‘আমি অভিযুক্ত যুবককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘এ সব কী চলছে? তুই কী করেছিস ওর সঙ্গে?’ তখন অভিযুক্ত জবাবে বলে, ‘এ সব নিয়ে ভাবিস না। ও মাঝেমধ্যেই এ রকম করে। আগামিকাল সকালে ওকে ফোন করে নিস।’’’ অভিযুক্ত যুবক কি তরুণীকে কোনও টাকা ধার দিয়েছিলেন? তদন্তকারীদের ওই প্রশ্নের জবাবে তরুণী বলেছেন, ‘‘৫০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল ছেলেটি। সেই টাকা ফেরত পায়নি।’’ কিন্তু এক দিনের পরিচয়ে কী ভাবে যুগলের কাছ থেকে এই তথ্যও পেয়ে গেলেন তিনি?
আনন্দবাজার অনলাইন ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, ‘‘এই কেসের সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমার যতটুকু জানা ছিল, তা জানিয়েছি। আমার মোবাইল থেকে পেনড্রাইভে সমস্ত তথ্য নিয়েছেন তদন্তকারীরা। এর বেশি আর কিচ্ছু জানি না।’’
তবে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই তরুণীর বয়ান ভাবাচ্ছে তাদের। এক, সত্যি যদি তিন জনের এক দিনের পরিচয় হয়, তবে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য কী ভাবে জানতে পারলেন তিনি? দুই, সদ্য পরিচয় হওয়া কোনও ব্যক্তির হোয়াট্সঅ্যাপ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন কেন তিনি? তিন, কোন সূত্রে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে তরুণীর পরিচয় হয়েছিল? চার, কী ভাবে কৃষ্ণনগরে দুর্গাপুজোর কার্নিভালের তাঁদের আলাপ হয়েছিল? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ধৃত যুবক এবং ওই তরুণীকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। দু’জনের কাছ থেকে পাওয়া বয়ানের ভিত্তিতে আবার তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy