শুধু একটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেই এক বছরে প্রায় সাড়ে এগারশোর মত ‘নন ইনস্টিউশনাল বার্থ সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়েছে। চাপড়ার সীমান্তবর্তী এই বিপুল সংখ্যক শংসাপত্র দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পরে প্রশাসনিক স্তরে শুরু হয়েছে তদন্ত। এর ব্যাখা চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েতের জন্ম-মৃত্যু বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মীকে। উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় এ বারে তাঁর বিরুদ্ধে চাপড়া থানায় অভিযোগ করলেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধান। যদিও অভিযুক্ত কর্মী পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে হাঁসখালি ব্লকের বিজেপি পরিচালিত বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় পঞ্চায়েতের সচিব-সহ চার জন অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বারে চাপড়া ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিপুল সংখ্যক জন্মের শংসাপত্র দেওয়ার কথা সামনে আসার পরে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। পঞ্চায়েতের ওই কর্মীর চিঠির উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে প্রধান চাপড়া থানার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তার পরেই প্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, শংসাপত্রে যেহেতু প্রধানের স্বাক্ষর থাকে তাই তাঁর অজান্তে কিছু হওয়া সম্ভব নয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিগত এক বছরে এই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ১১২৯টি ‘নন ইনস্টিউশনাল বার্ধ সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়েছে। যাদের জন্ম সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে জন্ম হয়নি তাদের ‘নন ইনস্টিউশনাল’ জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হয়ে থাকে। এক বছরে এত সংখ্যক শংসাপত্র দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় অনেকেই পঞ্চায়েতের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। শুরু হয় তদন্ত। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পরই পঞ্চায়েত কর্মী আশিস কর্মকারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বুধবার তদন্তকারীরা হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে যান। অভিযুক্ত পঞ্চায়েত কর্মী পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলেন, “আমরা চাই ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত করুক পুলিশ। কারণ, এক জন কর্মীর পক্ষে এমন করা সম্ভব নয়। প্রধানের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ, তিনিই কিন্তু স্বাক্ষর করে থাকেন।” প্রধান বিউটি খাতুন বলেন, “আমরা ওই কর্মীকে শো-কজ় করেছিলাম। কিন্তু তার উত্তর মোটেও সন্তোষজনক নয় বলেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।” কিন্তু শংসাপত্রে যে প্রধানের স্বাক্ষর থাকে? তিনি বলেন, “তদন্ত চলছে। তাই এই বিষয়ে যা বলারপরে বলব।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)