Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

প্লাস্টিক ছেড়ে কাপড়, শুরুতেই সাড়া

শান্তিপুর শহরকে মিহি প্লাস্টিকের খপ্পর থেকে মুক্ত করার লড়াইয়ের শুরুতেই অনেকটা সাফল্য মিলল।

শান্তিপুর: কাপড়ের ব্যাগে পেয়ারা বিক্রি। বুধবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

শান্তিপুর: কাপড়ের ব্যাগে পেয়ারা বিক্রি। বুধবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৮
Share: Save:

নিরঙ্কুশ হল না। তবে শান্তিপুর শহরকে মিহি প্লাস্টিকের খপ্পর থেকে মুক্ত করার লড়াইয়ের শুরুতেই অনেকটা সাফল্য মিলল। বছর শুরুর দিনে দোকানে-বাজারে ইতিউতি কিছু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দেখা গেল বটে, কিন্তু জিন যে অনেকটাই বোতলবন্দি তা-ও স্পষ্ট হয়ে গেল। পুরসভা এ দিন জরিমানা করতে পথে নামেনি। কিন্তু শান্তিপুরবাসীই সচেতনতার সাক্ষর রেখে গেলেন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে জরিমানা করাও শুরু হবে বলে পুরসভা জানিয়েছে।

বুধবার সকালে শহরের ডাকঘর মোড়ের কাছে রাস্তার ধারে পেয়ারা নিয়ে বসেছিলেন মানারুল শেখ। বছর দশেক ধরে এই এলাকাতেই পেয়ারা বিক্রি করছেন তিনি। এত দিন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দিতেন। কিন্তু এ দিন তিনি খরিদ্দারদের দিয়েছেন পরিবেশবান্ধব কাপড়ের ব্যাগ। মানারুল বলেন, “মাসখানেক আগে থেকেই প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। খরিদ্দারদেরও বলে দিয়েছি, এখন এই ব্যাগেই জিনিস নিতে হবে।” তিনি জানান, একশো পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ২২-২৩ টাকা দরে কিনছেন, অর্থাৎ একটা কাপড়ের ক্যারিব্যাগের দাম পড়ছে চার আনারও কম।

শান্তিপুরের এক হোটেল ব্যবসায়ী অভিজিত বাগচিও বলেন, “দোকানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ রাখছি না। খরিদ্দারেরা খাবার পার্সেল করে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে ফয়েলে মুড়ে কাপড়ের ব্যাগে দিয়ে দিচ্ছি।” নানা বাজারে ফুল এবং মিষ্টির দোকানেও মিহি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ সে ভাবে দেখা যায়নি। বরং অনেক জায়গাতেই দেখা গিয়েছে, লোকের হাতে ঝুলছে কাপড়ের ব্যাগ।

বড়বাজারের মতো এলাকাতেও সে ভাবে মিহি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেখা যায়নি। বড়বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন বলেন, “আমরা আগে থেকেই ব্যবসায়ীদের পরিবেশবান্ধব কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলেছি। তাতে সাড়াও মিলেছে।”

তবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার যে একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এমন নয়। আগের চেয়ে কমলেও শহরের কোথাও-কোথাও যে তার উঁকিঝুঁকি দেখা গিয়েছে। যেমন, কাশ্যপপাড়া মোড়ের কাছে এক জনকে দেখা গেল, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে করে ফল নিয়ে চলেছেন। প্লাস্টিক কোথায় পেলেন তা শুধোতেই আমতা-আমতা করে দ্রুত উধাও হলেন তিনি। এ রকম নজির আরও কিছু মিলেছে।

এর আগে কৃষ্ণনগরেও নিষিদ্ধ হয়েছিল প্লাস্টিক সামগ্রী। গোড়ায় তা ব্যাপক সাড়া ফেললেও নজরদারির অভাবে ফের তার দেখা মিলছে সদর শহরে। সে কারণে শান্তিপুরেও প্রশাসনের সতর্ক নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকেই।

চড়কতলা কেসি দাস রোডে চায়ের দোকান মথুরা কর্মকারের। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দোকানে প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করেন না। তার বদলে মাটির ছোট খুড়ি ব্যবহার করে আসছেন। মথুরা বলেন, “এক বার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় যে সব প্লাস্টিকজাত সামগ্রী, সেই সবই বন্ধ করা দরকার। আর নজরদারি যদি না হয়, প্লাস্টিক ব্যবহার পুরো বন্ধ হবে না। দু’দিন পরে আবার আগের মতো শুরু হবে।”

শান্তিপুরের বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “সবার আগে আমাদের সকলেরই উচিত নিজেদের অভ্যাস বদল করা। আগে তো প্লাস্টিক ছিল না। তখন তো পরিবেশবান্ধব জিনিসই আমরা ব্যবহার করতাম। সেই অভ্যাসে আগে ফিরে যাওয়া দরকার।” তবে সেই সঙ্গে নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথাও মানছেন তিনি।

শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, “এখনও পর্যন্ত প্লাস্টিক বন্ধের চেষ্টায় আমরা মানুষের থেকে ভাল সাড়া পেয়েছি। বৃহস্পতিবার থেকে জরিমানা নেওয়াও শুরু হয়ে যাবে। কড়া নজরদারি চালানো হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Santipur Plastic Ban Environment Plastic Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy