দেওয়ালে সাঁটা হয়েছে এমনই স্টিকার। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার ধারে বাড়ির দেওয়াল নোংরা করা আটকাতে ঠাকুর-দেবতার ছবি লাগানোর চল অনেক দিনের।
এমনিতে ‘প্রস্রাব করিবেন না’ লিখলে কেউ পাত্তাই দেয় না, কিন্তু ঠাকুরের ছবি লাগানো থাকলে মানে-মানে সরে পড়ে।
সেই ফর্মুলা এ বার কাজে লাগাচ্ছে সরকারি হাসপাতালও। যত্রতত্র পান-গুটখার পিক ফেলা আটকাতে দৈবের শরণাপন্ন হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে শুধু কালী বা শিবের ছবি নয়। বরং তিন ধর্মের লোকজনের কথা মাথায় রেখে মন্দির, মসজিদ, গির্জার ছবি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দেওয়ালে, সিঁড়ির কোণে।
হাসপাতালের সিঁড়ির দেওয়ালে এলোপাথাড়ি পিকের ছোপ দেখতে পাওয়া প্রায় রুটিন এ রাজ্যে। নানা ভাবে সতর্ক করে, ‘থুতু ফেলিবেন না’ বা ‘এখানে পানের পিক ফেলা মানা’ লিখেও কোনও কাজ হয় না। অবাধ্য জনতাকে বাগে আনতে তাই বিভিন্ন ওয়ার্ডের সিঁড়ির কোণে বা বারান্দার দেওয়ালের টাইলসে সাঁটানো হয়েছে মন্দির, মসজিদ ও গির্জার ছবি দেওয়া স্টিকার। যা দেখে পিক ফেলতে গিয়েও গিলে ফেলছে লোকজন। যা দেখে এখন একই রাস্তা নেওয়ার কথা ভাবছে নদিয়াও।
ডোমকলের হুমায়ুন কবির বুধবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে এসেছিলেন শ্বশুরকে দেখতে। তিনি বলেন, “মাস দুয়েক আগেও এক বার হাসপাতালে আসতে হয়েছিল। তখন দেখেছিলাম, সিঁড়ির কোণগুলোয় পানের পিকে পুরু হয়ে লেপ্টে রয়েছে। এখন দেখছি ছবিটা বদলে গিয়েছে। মন্দির মসজিদ গির্জার ছবিতে থুতু ফেলার সাহস কে-ই বা পাবে?”
হুমায়ুন যখন এই কথা বলছেন, পান চিবোতে-চিবোতে হাসপাতালে ঢুকেছিলেন এক জন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে অভ্যেস বশে পিচিক করে পিক ফেলতে যাবেন, দেওয়ালে চোখ পড়তেই থমকে গেলেন। মুখ ঘুরিয়ে চোখে চোখ পড়তেই লাজুক Qকরে এ দিক-ও দিক পানের পিক ফেলে দিই। হাসপাতালের কর্তারা এ বার ভালই জব্দ করেছেন! বদভ্যেসটা শুধরে যাবে হয়তো।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, “পানের পিকে সিঁড়ি থেকে শুরু করে হাসপাতালের নানা দেওয়ালের কোণ নোংরা হচ্ছিল। তাই আমরা পবিত্র উপাসনালয়ের ছবি দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছি।” তিনি জানান, মাস দেড়েক আগে ওই সব ছবি বসানোর পরে যত্রতত্র পিক ফেলার প্রবণতা অনেক কমে গিয়েছে।
পড়শি জেলায় দাওয়াই কাজ দিতে দেখে নড়েচড়ে বসেছেন নদিয়ার কর্তারাও। নদিয়া জেলা হাসপাতালের দু’টি ক্যাম্পাস— একটি শক্তিনগর, অন্যটি সদর। দুই ক্যাম্পাসেই সিঁড়ির কোণ বা দেওয়াল রোগীর আত্মীয়-স্বজন এবং হাসপাতালের কিছু কর্মীর পান-দোষের সাক্ষ্য দগদগ করছে।
নদিয়া জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “আমাদের হাসপাতালেও লোকজন পানের পিক ফেলে চলেছে। নানা ভাবে নোটিস আটকানো যাচ্ছে না। এখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে যেহেতু উপাসনালয়ের ছবি লাগিয়ে কাজ দিচ্ছে, আমরাও এমনটা করতে পারি। বিষয়টা জানার পর থেকেই ভাবনাচিন্তা করছি।”
সিধে কথায় যখন কাজ হচ্ছে না, ঈশ্বর-আল্লার দোর ধরা ছাড়া আর উপায়ই বা কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy