একে প্রথম ভোটার। তার উপরে তাদের বাস্তবিক অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই তাদেরকে ‘ভূতুড়ে’ ভোটার হিসাবে কটাক্ষ করছেন। আর সেই সমস্ত ভোটারদের একটাই ফোন নম্বর। সেটা সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তব্যরত সচিবের। আর এই বিষয়টি সামনে আসাতে রীতিমত অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে। তার পরেও প্রশ্ন উঠছে, ভোটার তালিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত একাধিক আধিকারিকের চোখ এড়িয়ে কী ভাবে এমনটা সম্ভব হল। এর সদুত্তরও নেই প্রশাসনের কাছে। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের নওপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল পরিচালিত। এই এলাকার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা অভিযোগ উঠছে। যে এমন প্রায় একশ জনের নাম আছে যাদের অনেকেরই অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কেউ কেউ তিন-চার বছর আগে সেই এলাকায় বসবাস করছেন। তারা আগে কোথায় বসবাস করছিলেন তাও পরিষ্কার নয়। এদের মধ্যে আবার বেশির ভাগেরই বয়স ৪০ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এমন বেশি বয়সে কী ভাবে এই সমস্ত মানুষ এত সহজে ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেললেন? কেনই বা তারা এতদিন তালিকায় নাম তোলেননি? এর আগেই বা তারা কোথায় ছিলেন? সঠিক ভাবে তাদের নথিপত্র খতিয়ে দেখলে কী আদৌ তাদের নাম ভোটার তালিকায় উঠতে পারত?
অনেকেই তাই অভিযোগ করছেন যে, এই ‘বিতর্কিত’ ভোটারদের নাম তালিকায় ওঠার পিছনে কী প্রশাসনের তরফে কোনও ফাঁক থেকে গিয়েছে? বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব অখিল কুমার বিশ্বাসের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই সমস্ত ভোটারদের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র অখিলের নামটাই দেওয়া আছে। আর এখানেই প্রশ্ন ওই সমস্ত ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের ক্ষেত্রে কেন কেবল মাত্র পঞ্চায়েতের সচিবের নম্বরটাই দেওয়া থাকবে?”
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন এলাকারই বাসিন্দা প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য আবদুর রহিম শেখ। তিনি বলেন, “এর ভিতরে গভীর দুর্নীতি লুকিয়ে আছে। তা না হলে কেন সমস্ত সন্দেহজনক ভোটারদের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র পঞ্চায়েত সচিবের ফোন নম্বর দেওয়া হবে?” তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয়, পোস্টঅফিস থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় ভোটার কার্ড দিতে গেলে সেই ব্যক্তিকে পেত না। কারণ, সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় তার কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পেত না। ফলে কার্ড ফেরত চলে যেত। এবং দুর্নীতিটা সামনে চলে আসত। আমাদের দৃ্ঢ় বিশ্বাস, সেই সমস্যা যাতে না হয় তার জন্যই সচিবের নম্বরটা দেওয়া হয়েছিল। যাতে তার হাতেই ওই সমস্ত ভূতুড়ে ভোটারদের ভোটার কার্ড চলে আসে। পরে তিনি যাতে সেই ভূতুড়ে ভোটারদের হাতে কার্ডগুলি তুলে দিতে পারেন।”
অভিযুক্ত সচিব অখিল কুমার বিশ্বাস অবশ্য দাবি করছেন, “আমাকে প্রথমে পোষ্টঅফিস থেকে ফোন করে কার্ড নেওয়ার কথা বলে। শুনেই তো আমি অবাক হয়ে যাই। এখনও বুঝতে পারছি না এত জন ভোটারের ক্ষেত্রে আমার নম্বর কী ভাবে দেওয়া হল। আমি এর কিছুই জানি না।” প্রধান নাজমা বানু বলেন,“নম্বরটি আমাদের সচিবেরই। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে তা প্রশাসন তদন্ত দেখুক।” জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে যদি অভিযোগ ধরা পড়ে বা গাফিলতি উঠে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)