Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Suti

শোক ভুলে ক্ষোভে উত্তাল সরলা গ্রাম

সরলা গ্রাম থেকে মধুডিহি গ্রাম হয়ে আহিরণ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের একটি বিকল্প পথ রয়েছে, যা প্রায় ৩৪ ফুট চওড়া। সেই রাস্তার এতটাই বেহাল অবস্থা যে সেখান দিয়ে চলাচল করা যায় না।

Students

সুতির সরলা গ্রামে বিক্ষোভে পড়ুয়ারা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
সুতি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩১
Share: Save:

দুই ছাত্রীর মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠল সুতির গ্রাম সরলা। শুক্রবার এই গ্রামেরই দুই ছাত্রী স্কুল থেকে সবুজ সাথীর নতুন সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাকে পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে। তাদের এক সহপাঠী এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। শোকের এই আবহেই শনিবার সহস্রাধিক গ্রামবাসী দল বেঁধে বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে জোড়া দাবিতে। কিন্তু তার আগেই খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন সেখানে ছুটে গিয়ে তাদের কোনও রকমে আটকালেও ক্ষোভ কমাতে পারেনি।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সুতি ২ ব্লকের সরলা গ্রামে দ্বিতল ঝাঁ চকচকে স্কুল রয়েছে যা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে চলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তারপরেই ছাত্রছাত্রীদের নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ছুটতে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে পাশের সুতি ১ ব্লকের আহিরণে। সেখানে পাশাপাশি রয়েছে তিন তিনটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। অথচ ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সরলার মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রটিকে আজও দশম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়নি।

আহিরণের যে কোনও স্কুলে যেতে ভরসা বলতে ৭ কিলোমিটার সড়ক পথ, যার বেশির ভাগটাই ব্যস্ত জনবহুল জাতীয় সড়ক।গ্রামবাসীদের দ্বিতীয় দাবি, সরলা গ্রাম থেকে মধুডিহি গ্রাম হয়ে আহিরণ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের একটি বিকল্প পথ রয়েছে, যা প্রায় ৩৪ ফুট চওড়া। সেই রাস্তার এতটাই বেহাল অবস্থা যে সেখান দিয়ে চলাচল করা যায় না।

গ্রামের বাসিন্দা ভাগবত মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘আমাদের গ্রামটি সুতি ২ নম্বর ব্লকে, ওই বেহাল রাস্তার কিছুটা পড়ে সুতি ২ ব্লকে, কিছুটা সুতি ১ ব্লকে, তাই দুটি ব্লকের কেউই এই রাস্তা সংস্কারে গা করে না। আর তাই বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে স্কুলে ও বাজারে যাতায়াত করতে হচ্ছে ৪-৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের। ফলে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে এই এলাকায়। দু’দুবার এই ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হল সরলার মানুষ।”

এ দিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছিলেন শুক্রবার দুর্ঘটনায় মৃত দুই ছাত্রীর বাবা, মায়েরাও। মৃত বানি মণ্ডলের বাবা সঞ্জয় পেশায় মৎস্যজীবী। দীপিকা মণ্ডলের বাবা স্বপন দিনমজুর। দু’জনেরই কথায়, গ্রামে স্কুল থাকলে এ ভাবে হারাতে হত না মেয়েদের। সঞ্জয় বলেন, ‘‘মেয়ের প্রাণের বিনিময়ে এ বার যদি টনক নড়ে প্রশাসনের।”

পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তারা যান সরলা গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে। ওই শিক্ষাকেন্দ্রে ৪ জন শিক্ষক ও ৪১৮ জন ছাত্রছাত্রী। ২০০৩ সাল থেকে চলছে এই শিক্ষা কেন্দ্র। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক তুষারকান্তি সরকার বলেন, “দোতলা ভবনে ১১টি শ্রেণি কক্ষ। অষ্টম শ্রেণির পর সকলকেই ছেড়ে দিতে হয়। মাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত হলেও অন্তত একটা স্তর তো পার হতে পারে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক হলেও ঘরের কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা হবে শিক্ষকের।”

সুতি ২ ব্লকের বিডিও সমীরণকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “আমরা সরজমিনে স্কুলের অবস্থাটা দেখে গেলাম। নাম মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র হলেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয় এখানে। দু’মাসের মধ্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা যায় কি না, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। সেটা করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। রাস্তার বিষয়ে গ্রামবাসীদের বলেছি একটি গণ দরখাস্ত দিতে। সেই দরখাস্ত পাঠিয়ে দেওয়া হবে জেলাস্তরে। ওটা একটা গ্রামের মেঠো রাস্তা। সে রাস্তা নিয়মিত ব্যবহারও হয় না। রাস্তাটিকে উন্নীত করার চেষ্টা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Suti Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy