প্রতীকী ছবি।
কোথাও গাছতলায়, কোথাও আবার কারও বারান্দায় ছিল প্রাথমিক স্কুল। অফিস ঘর বলে কিছুই ছিল না। অতএব, প্রধানশিক্ষক বা স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের বাড়িতেই থাকত স্কুলের নথি। ফলে অনেক স্কুলের পুরনো নথিপত্রের কোনও হদিশ নেই। আর এত দিন তা নিয়ে কেউ টুঁ শব্দটি না করলেও এখন প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ বিভিন্ন স্কুলে এসে ভিড় জমাচ্ছেন ৫০ বা ৬০ বছর আগের স্কুলের সেই শংসাপত্র পেতে। তাঁদের একটাই দাবি, এনআরসি-র প্রথম ধাপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শংসাপত্র, তাই সেটা তাঁদের দিতেই হবে। আর এতেই প্রায় দিনই লাটে উঠেছে পঠনপাঠন।
বুধবার ডোমকলের মাঝপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমনই দাবি তুলে সকাল থেকে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এমনকি শংসাপত্র না পেলে স্কুলের শিক্ষকদের আটকে রাখার হুমকিও দেন তাঁরা। ডোমকল থানার পুলিশ দ্রুত সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘আমার বোন আপেল খাতুন ৭৯ সালে মাঝপাড়ার এই স্কুল ছেড়েছে। এনআরসি-র ভয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতিদিন ফোন করে সার্টিফিকেট চাইছে। আর আমি রোজ স্কুলে এসে ফিরে যাচ্ছি। স্কুলের তরফে জানানো হচ্ছে ওই সময়ের নথি তাদের কাছে নেই। আমরা পড়েছি মহা বিপদে।’’
এনআরসি আতঙ্ক যে কতটা মারাত্মক আকার নিয়েছে, এ হল তারই টুকরো দৃশ্য।
এই ঘটনায় শাঁখের করাতের মতো অবস্থা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রামের অসহায় মানুষ এসে চাপ দিচ্ছেন শংসাপত্রের জন্য। কিন্তু নথি নেই বলে দেওয়া যাচ্ছে না।
মাঝপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক সেলিম উর রহমান বলেন, ‘‘আমি বছরখানেক আগে মাঝপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছি। নথি বুঝে নিতে গিয়ে দেখি ১৯৫৫ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা হলেও ওই সময় থেকে ৬৪ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৬৬ সাল থেকে ৭৯ সাল পর্যন্ত নথি নেই।’’
আরও একটি সমস্যা রয়েছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, নথি থাকলেও অনেক সময় সমস্যা হচ্ছে। যখন কেউ স্কুলে ভর্তি হয়েছেন, তখন যে নাম রেজিস্টারে দেওয়া হয়েছে, শংসাপত্র চাইলে সেটাই দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু গ্রামের অনেকেরই ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডে নাম আলাদা। তাঁরা সেই নামেই তাই শংসাপত্র চাইছেন। কিন্তু তা দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তবে ডোমকলের গঙ্গাদাসপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘ম্যাজিস্ট্রেটের এফিডেভিট বা পুরপ্রধানের শংসাপত্র নিয়ে এলেই আমি শংসাপত্র দিচ্ছি। তবে সেটা রেজিস্টার মিলিয়ে নয়।’’ রেজিস্টার ছাড়া কিভাবে দিচ্ছেন? তার কথায়, ‘‘আমি জানি এভাবে শংসাপত্র দেওয়া যায়, ফলে দিচ্ছি।’’ যদিও ডোমকলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুকর্না দাস বলছেন, ‘‘আমরা শিক্ষকদের পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছি রেজিস্টারের বাইরে কোনও শংসাপত্র দেওয়া যাবে না। আর যে স্কুলের নথি নেই তা নিয়ে কী করা যায়, সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব আমরা।’’ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সহ-সভাপতি পার্থ সারথি সরকার বলছেন, ‘‘রেজিস্টার ছাড়া শংসাপত্র কীভাবে দেওয়া হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy