স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে জটলা গ্রামবাসীদের। নিজস্ব চিত্র।
আড়াই বছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ। সেখান থেকে বুধবার আসবাবপত্র বের করে আনতে গিয়েছিলেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। কিন্তু তা করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পড়তে হল তাঁদের। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বাড়ালা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। আসবাব নিয়ে যাওয়ার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। এক সময় হাতাহাতিও শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের মধ্যে।
তৃণমূলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত আসবাবপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে খালি পিক-আপ ভ্যান ফেরত যায় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। গ্রামবাসীদের দাবি, আড়াই বছর আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। প্রসূতিদেরও অসুবিধে হচ্ছে। তাঁদের দাবি, বন্ধ অন্তর্বিভাগ ফের চালু করতে হবে। এর আগে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলার দাবিতে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে একাধিক বার বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু লাভ হয়নি। মনে করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভের প্রকাশ এ দিন ঘটেছে।
প্রায় ৪০ বছর আগে চালু হয়েছিল এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তিন দশক ধরে বন্ধ থাকার পর ডেলিভারি পয়েন্ট হিসেবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ চালু হয়েছিল। ছিলেন তিন জন চিকিৎসক, পাঁচ জন নার্স, চার জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। প্যাথলজি পরীক্ষার কর্মী, ফার্মাসিস্টও ছিলেন। কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয় নয়া ভবন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র নতুন করে চালু হওয়ার ফলে জরুর ও জামুয়ার পঞ্চায়েতের অন্তত ৩০টি গ্রামের বাসিন্দারা উপকৃত হয়েছিলেন। কিন্তু আড়াই বছর আগে একে একে তুলে নেওয়া হয় কর্মী, নার্স ও চিকিৎসককে। বর্তমানে রয়েছেন একজন কমিউনিটি হেলথ অফিসার। কোনওরকমে চলে বহির্বিভাগটি। ওই গ্রামের বাসিন্দা পম্পা মাঝির অভিযোগ, “এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হওয়ায় প্রসূতিদের সুবিধে হয়েছিল। সাজানো-গোছানো স্বাস্থ্যকেন্দ্র এ ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে, তা ভাবিনি।’’ রবিউল ইসলাম নামে আরেক জন বলেন, “অন্তর্বিভাগ চালু থাকায় সারা দিন ধরে আশপাশের মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছিলেন। এখন যে কোনও প্রয়োজনে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে রঘুনাথগঞ্জে।
গ্রামে কোনও চিকিৎসক নেই।’’ হানিফ শেখ বলছেন, “আমরা আশায় আশায় ছিলাম, আজ না হোক কাল অন্তর্বিভাগ চালু হবে। কিন্তু একে একে গাড়িতে করে অন্তর্বিভাগের সমস্ত আসবাবপত্র তুলে রাজনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রোগীদের বসার চেয়ারগুলি আজ পিক-আপ ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তাতেই স্পষ্ট, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। তাই আমরা রুখেছি।’’’ জামুয়ার গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান অংশু মাঝি বলেন, “২২টি গ্রাম রয়েছে জামুয়ার পঞ্চায়েতে। পাশেই বীরভূমের একাধিক গ্রাম, জরুর পঞ্চায়েত। আমরা চাই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা থাক।” রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের বিডিও আবু তৈয়ব বলেন, “বিক্ষোভের কথা জেনে আমি প্রধানকে সেখানে পাঠিয়ে ছিলাম। শুক্রবার বিকেলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও আমি বাড়ালায় যাব।’’ জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, “চালু স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করা ঠিক হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে বন্ধ হয়েছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ তাই স্বাভাবিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy