প্রতীকী ছবি
কাজের কাজ যখন হচ্ছে, নামে কী এসে যায়! মুর্শিদাবাদে যা কন্যাশ্রীযোদ্ধা, নদিয়ায় তা স্বয়ংসিদ্ধা। স্কুলের মেয়েরাই একজোট হয়ে রুখে দিচ্ছে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে।
তেহট্টের নাজিরপুরে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ফুর্তি খাতুনের। নাজিরপুর সারদা বালিকা বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর বাড়ি থানারপাড়ার টোপলা গ্রামে। খবর আসে বুধবার। বৃহস্পতিবারেই ওই বাড়িতে গিয়ে হাজির স্বয়ংসিদ্ধা মেয়ের দল। সঙ্গে পুলিশ। আর্জি, এত কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে সর্বনাশ করবেন না। প্রথমে বেঁকে বসলেও শেষে বাড়ির লোকেরা মেনে নেন। ফুর্তিকে ফের নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দেন।
নাজিরপুরের ওই স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে স্বয়ংসিদ্ধা কমিটি গড়া হয়েছে গত ১৮ মার্চ। স্কুলের পরিচালন সমিতি তথা ওই স্বয়ংসিদ্ধা কমিটির সভাপতি প্রদীপ্ত দাস জানান, প্রধান শিক্ষিকা, এক সহশিক্ষিকা, স্থানীয় পুলিশ অফিসার, এক জন মহিলা পুলিশ, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের এক মহিলা সদস্য এবং নবম ও একাদশ শ্রেণির চার ছাত্রীকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি করা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ওই ছাত্রীদের উপরেই। তারাই চারদিকে খোঁজখবর নিচ্ছে। নিজের পাড়া বা অন্য গ্রামে কোনও নাবালিকার বিয়ে ঠিক হচ্ছে শুনলেই জানাচ্ছে শিক্ষিকাকে। তার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে গত আট মাসে আট জন স্কুলছাত্রীর বিয়ে বন্ধ সম্ভব হয়েছে। ঠিক যে কাজ মুর্শিদাবাদে করছে কন্যাশ্রীযোদ্ধারা। হরিহরপাড়া ব্লকে গত দশ মাসে ৫৫টি নাবালিকার বিয়ে আটকানো হয়েছে। সেখানে ৩২ জন ছাত্রীকে নিয়ে গড়া হয়েছে বাহিনী। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রুকুনপুরে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তেরো বছরের এক কিশোরীর। তার মায়ের বয়সই তিরিশ ছোঁয়নি।
হরিহরপাড়াতে কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করা জাকিরুন বিবি বলেন, ‘‘মেয়েটির বিয়ে হচ্ছিল পাশে প্রতাপপুরে। জোর করে তাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আমরা মেয়েটির মাকে বললাম, এত কম বয়সে শাশুড়ি হতে আপনার খারাপলাগছে না? গ্রামের বেশ কিছু মহিলাকেও বোঝানো হয়। মায়েদের সচেতনতা আগে প্রয়োজন। তবেই মেয়ে সচেতন হবে।’’ দুই জেলাতেই মেয়ের মায়েদের বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, কম বয়সে বিয়ে দিলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হতে পারে মেয়েটিরই। নাবালিকা অবস্থায় সন্তানধারণ ও প্রসবের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়। প্রাণ যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। নাজিরপুরের স্কুল শিক্ষিকা ও স্বয়ংসিদ্ধা গোষ্ঠীর সদস্য জেসমিনা খাতুন জানান, অপরিণত বয়সে বিয়ে কত ক্ষতিকর, তা মেয়েদের বোঝানো গিয়েছে। তাই গ্রামে বিয়ে ঠিক হলেই খবর চলে আসছে। চার মাস আগে ছিটকা গ্রামে দুই নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। মাস পাঁচেক আগে স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী, টোপলা গ্রামের নাসিমা খাতুনের বিয়ে রোখা হয়। ওই দিনে ওই গ্রামেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রেশমা খাতুনেরও বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। বিয়ে দেবেন না বলে তার বাবাকে দিয়ে মুচলেকা লেখানো হয়। পুলিশও মনে করছে, এ ভাবে চললে নাবালিকা বিয়ের দিন ফুরোতে আর বেশি দিন লাগবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy