মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দাবিটা উঠছিল অনেক দিন ধরেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
জমিদাতাদের একাংশের দাবি ছিল, জাতীয় সড়কের পাশে উচ্ছেদ হওয়া ভাড়াটে এবং জবরদখলকারীদের পুনর্বাসন দিতে হবে। এত দিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। ফলে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছিলই। বুধবার কৃষ্ণনগরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে সেটাই উঠে এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী ‘মানবিক কারণে’ পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেওয়ায় তাঁরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। যদিও কার পুনর্বাসন কোথায় কী ভাবে হবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা স্পষ্ট নয়।
২০০৯ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই জাতীয় সড়কের দু’পাশে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু একাধিক বার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেও নানা দিক থেকে বাধার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে হয় প্রশাসনকে। এমনও দাবি উঠেছিল যে যাঁদের নিজস্ব জমিতে দোকানঘর নেই, যারা মূলত জবরদখলকারী বা যাঁরা অন্যের দোকানঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন, তাঁদেরও পুনর্বাসন দিতে হবে। যা নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন চলতে থাকে। আর তার মধ্যেই কৃষ্ণনগর থেকে বড় জাগুলিয়া পর্যন্ত অংশে নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা সংস্থা কাজ ছেড়ে চলে যায়।
এরই মধ্যে হাইকোর্ট দ্রুত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়। নতুন একটি সংস্থা কাজের বরাত নেয়। তার পরেই জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ করতে উদ্যোগী হয়। আর সেটা করতে গিয়েই ফের তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়ানোর এবং উচ্ছেদ হওয়া ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের দাবি উঠতে থাকে। এতে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। পুনর্বাসন চেয়ে তাঁদের উপরেও চাপ আসছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন কোনও সদর্থক পদক্ষেপ না-করায় শাসক দলের নেতারাও উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পাশে থাকতে পারছিলেন না।
বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে হাজার দুয়েক উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের আর্জি শুনেই মুখ্যমন্ত্রী পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “আমরা অনেক আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করছি। কিন্তু স্পষ্ট ভাবে কোনও সমাধানসূত্র বেরচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে আর কোনও সমস্যা থাকল না।”
ফুলিয়ার এক মোবাইল দোকানের মালিক শুভঙ্কর সরকারের কথায়, “আমাদের বিশ বছরের দোকান। আমরা তো অধিগ্রহণে বাধা দিইনি। তবে সংসার কী ভাবে টিকিয়ে রাখব, সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। মুখ্যমন্ত্রী বলার পর বুকে কিছুটা বল পাচ্ছি।” মিষ্টির দোকানি রামকৃষ্ণ পালের মনে অবশ্য কিছুটা সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, “আগেও তো কত লোকে কত প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিছুই তো হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী বলে গেলেন। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।”
প্রশাসনিক বৈঠকেই জেলাশাসক বিভু গোয়েল জানিয়েছিলেন, জেলা পরিষদের জমির পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মতীর্থ বা মার্কেট হাবে পুনর্বাসনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া, ব্যবসায়ীরা যদি জমি দেন, সেখানেও সরকারের তরফে দোকানঘর করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। সেই মতো চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়কে জমি দেখে দেওয়ার কথা বলে যান মুখ্যমন্ত্রী।
জেলা প্রাশসান সূত্রে জানা যাচ্ছে, মূলত চারটি জায়গায় পুনর্বাসন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তার মধ্যে রানাঘাটে আগেই একটি ব্যবসায়িক সংগঠন জমি দেওয়ায় সেখানে কর্মতীর্থ তৈরি হচ্ছে। সেখানে ঠাঁই পাবেন রানাঘাটের উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা। আবার বড় জাগুলিয়া ও ফুলিয়ায় বেশ কিছুটা করে জেলা পরিষদের জমি আছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে দিগনগরে। সেখানে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূলের রিক্তা কুন্ডু বলেন, “আমরা আগে থেকেই পুনর্বাসনের বিষয়ে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছিলাম। এ বার মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরে জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে কাজে নেমেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy