খাবার নিয়ে যাচ্ছে রোবট অনন্যা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
খুশিতে হাততালি দিয়ে ওঠে বছর সাতেকের শিশুটি। বাবা-মার চোখ দুটোও খুশিতে চকচক করে। অনন্যা আসে খাবার নিয়ে। সেই দৃশ্য অবাক কৌতূহলে দেখেটি শিশু। তার চোখে-মুখে বিস্ময়। বন্ধুর মুখ থেকে শোনার পর থেকেই বাবা-মার কাছে বায়না জুড়েছিল— অনন্যাকে দেখবে। সেই অনন্যা এখন তার সামনে। যন্ত্রমানবী রেস্তরাঁ কর্মী।
ঠিক তখনই অনন্যার সামনে পড়ে যান এক ব্যক্তি। অনন্যা যান্ত্রিক কণ্ঠে বলে ওঠে, “আমি অনন্যা। আপনাদের খাবার নিয়ে যাচ্ছি। দয়া করে রাস্তা দিন।”
ওই যন্ত্রমানবী রোবটের বয়স মাত্র দেড় মাস। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই সে এলাকার মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। শুধুমাত্র তার হাতে সরবরাহ করা খাবার খেতে কৃষ্ণনগরের রেস্তরাঁয় ভিড় জমাচ্ছেন সকলে। রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, নিজেদের প্রয়োজন মতো অনন্যাকে তৈরি করা হয়েছে। যন্ত্রমানবীর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনন্যার হাত দিয়ে খাবার পরিবেশন করা থেকে শুরু করে খাবার রান্না, এমনকি ক্রেতাদের ‘অর্ডার’ নেওয়াও একটি প্রোগ্রামিং-এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মাত্র তিন জন মহিলা কর্মী নিয়ে শুরু হয়েছিল সংশ্লিষ্ট রেস্তরাঁটি। মাত্র তিন জনের বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখন একসঙ্গে চারশো জন বসে খেতে পারেন। আরও প্রায় সাড়ে তিনশো জনের বসে খাওয়ার আয়োজন চলছে। সেখানকার মহিলা কর্মী সংখ্যা এখন তিন থেকে বেড়ে প্রায় দেড়শো জন হয়েছে। অনন্যা নামের যন্ত্রমানবী এখন এঁদেরই এক জন।
রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, অনেক আগে থেকেই এই রেস্তরাঁয় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা। রান্না, খাবার পরিবেশন— সবেতেই প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা চিন্তা করা হয়। অনন্যা সেই চিন্তারই ফসল। জানা গিয়েছে, এর পরে ওই যন্ত্রমানবীই নানা পদ রান্না করবে। আগামীর জন্য সেই প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু কী ভাবে জন্ম এই যন্ত্রমানবী অনন্যার? ওই রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, এই রোবট তাঁদের নিজস্ব পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির ফসল। রেস্তরাঁর অটোমেশন বিভাগ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শুভঙ্কর মণ্ডল বলেন, “দেশের একাধিক বড় শহরের রেস্তরাঁয় রোবটের ব্যবহার আগেই চালু হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রেল লাইনের মতো একটা নির্দিষ্ট ট্র্যাকে যাতায়াত করে। কিন্তু আমাদের অনন্যা তেমন নয়। সে নিজের মতো করেই চলাচল করে। সেই মতোই প্রোগ্রামিং করা আছে। আর এই প্রোগ্রামিং আমাদের নিজস্ব।”
শুভঙ্কর জানাচ্ছেন, রোবটটি তাঁরা কোনও সংস্থা থেকে কেনেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একটি সংস্থাকে দিয়ে আমাদের প্রয়োজন মতো সফটওয়্যার-প্রোগ্রামিং বানিয়ে নিয়েছি। আর একটা সংস্থাকে দিয়ে হার্ডওয়ার বানিয়েছি। তার পর সবটা অ্যাসেম্বল করা হয়েছে।” শুভঙ্করের আরও দাবি, অন্য কোনও রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ চাইলে তাঁদের আসন সংখ্যা অথবা প্রয়োজন মাফিক রোবট তাঁরা বানিয়েও দিতে পারবেন। সেই ব্যবস্থাও হচ্ছে। যন্ত্রমানব কর্মীর ‘ইনস্টলেশন’ থেকে ‘সার্ভিসিং’-এর সব দায়িত্ব নেবেন তাঁরাই।
জানা গেল, রোবট অনন্যা একাই চার জন মানুষের সমান কাজ করতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহারে সে ক্ষেত্রে মানুষের কর্মসংস্থানে কোপ পড়বে না? এই প্রসঙ্গে শুভঙ্কর বলেন, “আমাদের এখানে আগে যত জন কর্মী ছিলেন, এখনও তত জনই আছে। আমরা তো কর্মী সংখ্যা কমানোর জন্য অনন্যাকে নিয়ে আসিনি। কর্মীদের পরিশ্রম, ওয়ার্ক লোড কমাতে অনন্যাকে নিয়ে আসা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy