Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পাতে নুন-লঙ্কা এখন বিলাসিতা 

হঠাৎ করে দামী হয়ে ওঠা কাঁচালঙ্কা তাই আমজনতার খাবার টেবিল থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। সস্তার পাইস হোটেল কিংবা হাইওয়ের ধারের ধাবা— ভাত, রুটি, তরকা যে কোনও খাবারের সঙ্গে বিনিপয়সায় দু’-চার টুকরো পেঁয়াজ আর বাটি ভরা কাঁচালঙ্কা থাকাটাই রীতি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৫:২০
Share: Save:

ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, ডাল আর চিপসের প্লেটটা টেবিলে নামিয়ে রেখে পরিবেশনকারী পিছু ফিরতেই টেবিল থেকে ভদ্রলোক হেঁকে উঠলেন, “লঙ্কা-পেঁয়াজ কোথায় গেল? দু’টো কাঁচালঙ্কা দাও।” এবারে কাউন্টার থেকে উঠে এসে আধখানা কাঁচা পেঁয়াজ, দু’টো লঙ্কা আর একটুকরো লেবু এগিয়ে দিতে দিতে হোটেলের মালিক বলে উঠলেন, “লেবু-লঙ্কা রোজই থাকত। কিন্ত দু’শো টাকার কাঁচালঙ্কা কী করে এমনি দিই বলুন তো?”

হঠাৎ করে দামী হয়ে ওঠা কাঁচালঙ্কা তাই আমজনতার খাবার টেবিল থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। সস্তার পাইস হোটেল কিংবা হাইওয়ের ধারের ধাবা— ভাত, রুটি, তরকা যে কোনও খাবারের সঙ্গে বিনিপয়সায় দু’-চার টুকরো পেঁয়াজ আর বাটি ভরা কাঁচালঙ্কা থাকাটাই রীতি। একই নিয়ম রেস্তরাঁর ফাস্টফুডের সঙ্গে স্যালাডের বেলাতেও। কিন্তু করোনা আবহে হঠাৎ করে বেড়ে তিনগুণ দাম বেড়ে যাওয়ায় খাওয়ার পাতে কাঁচালঙ্কা দিতে ভুলেছেন হোটেল বা ধাবা মালিকেরা।

নবদ্বীপ বড়ালঘাটে খেয়াঘাট লাগোয়া হোটেল কমলেশ দাসের। মূলত পর্যটক-নির্ভর হোটেল এমনিতেই মার্চ থেকে বন্ধ ছিল। আন-লকের পর নাম কা ওয়াস্তে খুললেও মাছি তাড়াচ্ছেন লোকের অভাবে। তিনি সাফ বলেন, “একশো গ্রাম কাঁচা লঙ্কা কুড়ি টাকায় কিনে এই বাজারে খরিদ্দারকে খাওয়ানো মুশকিল। ফলে, না চাইলে কাঁচালঙ্কা দিচ্ছি না। কেউ চাইলে তবে দিচ্ছি।” যদি কেউ লঙ্কা চান, তাই টেবিল থেকে পেঁয়াজ, লেবুর বাটিও সরিয়ে রেখেছেন। কৃষ্ণনগর থেকে জাতীয় সড়ক ধরে খানিক এগোলেই বাবলু দাসের ধাবা। রবিবার সেখানে কাঁচালঙ্কা পাননি ক্রেতারা। তিনি বলেন, “সে দিন বাজারে গিয়ে লঙ্কার কেজি ১৮০ টাকা শুনে চমকে উঠেছি! আমার রোজ দুই কেজি লঙ্কা লাগে, নিরুপায় হয়ে অর্ধেক কিনেছি। এখন তা দিয়ে রান্না করব, না খরিদ্দারকে খাওয়াবো?” সোমবার অবশ্য অনেক কম দামে লঙ্কা কিনেছেন। তবে তার অর্ধেকই পচা, জানান তিনি।

লকডাউনের পর থেকে ভাটা পড়ছে হোটেল ব্যবসায়। টানা তিন মাস পর সরকারি নির্দেশে হোটেল-রেস্তরাঁ খুললেও তাতে লোকজন নেই বললেই চলে। বাবলু দাস বলেন, “আগে যেখানে রোজ পাঁচ-সাত হাজার টাকার কাজ হত, এখন এমন অবস্থা এক এক দিন কর্মচারীদেরও বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছি। কোনও লোক নেই। এই অবস্থায় তিরিশ টাকার আলু বা দুশো টাকার লঙ্কা হলে আমরা কোথায় যাবো?”

হোটেলে দিনে এক থেকে দেড় কেজি চাল রান্না করাচ্ছেন নবদ্বীপের কমলেশ দাস। বলেন, “আগেকার দিন আর নেই। আট-দশ কেজি চাল রান্না করেও কুল পেতাম না। এখন ওই সামান্য ভাত শেষ হতেই বিকেল গড়িয়ে যায়। বাজারের যা অবস্থা তাতে রেট কমাতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুশো টাকার কাঁচালঙ্কা টেবিলে রাখা বিলাসিতা।”

এই অবস্থায় হোটেলে রান্নার ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছেন মায়াপুরের প্রদীপ দাস। তিনি বলেন, “মায়াপুরের কোনও হোটেলই খোলা নেই। এখানে সবটাই ইস্কন-নির্ভর। সেই ইস্কনই ফাঁকা, তো আমাদের হোটেল খোলার প্রশ্নই ওঠে না। আর সরষের তেল থেকে চাল, আলু থেকে লঙ্কা সবই যখন আকাশছোঁয়া, তখন লাভ কী হোটেল চালিয়ে?”

এই অবসরে হোটেলের রান্নাঘরেও এই ঢুকেছে গুঁড়ো লঙ্কা। স্বাস্থ্য বিধি শিকেয়। যদিও ফেডারেশন অফ বেঙ্গল হোটেলিয়ার্সের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিত সরকারের কথায়, “একটু ভাল হোটেল সবার আগে নজর রাখে গুণমানে। ফলে, দাম যাই হোক নিজের সুনাম রাখতে সে কোনও দিন আপস করবে না। বিশেষত, এই সময়ে। তবে সস্তা হোটেলের সে দায় নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy