প্রতীকী চিত্র।
কেউ ভুগছেন ক্যানসারে, কারও কিডনি বা ফুসফুসের অসুখ। কারও হৃদরোগ। কারও নার্ভের অসুখ। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকেই তাঁদের কাউকে কলকাতার কোনও হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে একবার গেলে হয় না। নিয়মিত কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসককে দেখাতে হয়। ওষুধ বদলে যায়। নতুন করে পরীক্ষা করাতে হয়। কবে পরীক্ষা হবে, তার দিন পড়ে। সে দিন কলকাতা যেতে হয়।
কষ্ট করে হলেও ট্রেনে করে গিয়ে চিকিৎসকদের নিয়মিত দেখিয়েছেন মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ। এখন ট্রেন বন্ধ। তাঁরা যাচ্ছেন কী করে? প্রশ্ন করতেই অনেকেই উগরে দিলেন প্রচণ্ড বেদনা এবং ক্ষোভ। তাঁদের বক্তব্য, টাকা কোথায় যে বারবার গাড়ি ভাড়া করে যাবেন? কিন্তু বাস তো রয়েছে। তাতে উত্তর মিলছে, অসুস্থ রোগীকে বাসের রাস্তায় ঝাঁকুনি, ভিড়ের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া এক রকম অসম্ভব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের ও ভোরের কয়েকটি ট্রেনে মুর্শিদাবাদের লোকজন কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যেতেন। দিনভর কলকাতার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা করে রাতের দিকে ট্রেনে বাড়ি ফিরে আসেন। বহরমপুর থেকে ট্রেনে করে কলকাতা যাতয়াত করতে মাথা পিছু শ’দুয়েক টাকা খরচ হয়। সেখানে বহরমপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে গেলে সাড়ে চার হাজার টাকার ধাক্কা। লালগোলা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই টাকা খরচ করার মতো সংস্থান কত জনের রয়েছে?
লালগোলার সিসা রমজানপুরের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া রিমা খাতুনের পরিবার কিংবা হরিহরপাড়ার ডল্টনপুরের কান্তি ভাস্করের কাছে যেমন এই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। রিমার মা মুসবেরা বিবি বলেন, ‘‘মেয়ের মুখে যেখানে অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেখানে ঘা হয়ে আছে। পরে পিজিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় যেতে পারিনি। অন্য ভাবে যাওয়ার টাকা নেই।’’ লালগোলার সারজামান শেখ বলছেন, ‘‘চিকিৎসার জন্য মূলত ট্রেনে করে কলকাতায় যাই। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় করোনা পরিস্থিতির মাঝে গাড়ি ভাড়া করে দু’বার কলকাতা গিয়েছি। কিন্তু খরচ কোলানো শক্ত।’’ ক্যানসারে আক্রান্ত কান্তি ভাস্কর বলেন, ‘‘ট্রেনে যাতয়াতে খরচ কম। তাই সহজেই কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যেতে পারতাম। কিন্তু লকডাউনের সময় থেকে ট্রেন বন্ধ থাকায় আর কলকাতা যেতে পারিনি। এখন ট্রেন কবে চালু হবে, সে দিকে তাকিয়ে আছি।’’
জেলা পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘বাস এবং মিটারে চলা ট্যাক্সির ক্ষেত্রে আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সেখানে বাড়তি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বলে কোনও অভিযোগ শুনিনি।’’ কিন্তু তার বাইরেও অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে ছোট গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন বা নিচ্ছেন। ছোট গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করেন মোনায়েম হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘বাতানুকূল ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে ১১টাকা প্রতি কিলোমিটার, বড় গাড়ি ১৪ টাকা প্রতি কিলোমিটার করে নেওয়া হয়। বাতানুকূল না হলে দর কমে যথাক্রমে ১০ টাকা ও ১৩ টাকা করে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও নানা ধরনের রেট রয়েছে। মোটামুটি ভাবে কলকাতা যেতে পড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজার। বড় গাড়ি ৫২০০ থেকে ৫৬০০ টাকা।’’ এই হিসেব মতো, লালগোলা থেকে কলকাতার হাসপাতাল যেতে পড়বে হাজার সাতেক টাকা। রোগীরা অ্যাম্বুল্যান্সও ভাড়া করেন। অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের একটি সংগঠনের সম্পাদক সুশোভন চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এনআরএস-এর ক্ষেত্রে ৫২০০ টাকা এবং পিজি-র ক্ষেত্রে ৫৫০০ টাকা নেওয়া হয়।’’ তবে অ্যাম্বুল্যান্স মেলে না, এমন অভিযোগ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy