Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

ভোটাভুটির আগে বেপাত্তা প্রধান, অচল পঞ্চায়েত

প্রধান-উপ প্রধানের পাত্তা নেই। দেখা নেই অনুগামীদের। পাছে, অনাস্থার আগে শাসকদল কাউকে কব্জা করে নেয়। সমশেরগঞ্জের দু’টি পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটির আগে বেপাত্তা প্রধান ও উপ-প্রধান। একটি সিপিএমের ও অন্যটি কংগ্রেসের দখলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

প্রধান-উপ প্রধানের পাত্তা নেই। দেখা নেই অনুগামীদের। পাছে, অনাস্থার আগে শাসকদল কাউকে কব্জা করে নেয়। সমশেরগঞ্জের দু’টি পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটির আগে বেপাত্তা প্রধান ও উপ-প্রধান। একটি সিপিএমের ও অন্যটি কংগ্রেসের দখলে।

সামশেরগঞ্জের দোগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮ জন সদস্যকে নিয়ে প্রধান-উপ প্রধান ঘাঁটি গেড়েছেন ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে। দল ভাঙিয়ে ৯ জন সদস্যকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারাও। গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন আশপাশেরই নির্মীয়মাণ এক পলিটেকনিক কলেজে। একই ভাবে গাজিনগর মালঞ্চা পঞ্চায়েতেও প্রধানের নেতৃত্বে কংগ্রেস ও বাম জোটের ৬ জন এবং অন্যদিকে দলত্যাগী তৃণমূলের ৭ জন বেপাত্তা।

ফলে ওই দুই পঞ্চায়েত কর্মী শূন্য। প্রতিদিন শত শত মানুষ নিত্য প্রয়োজনে পঞ্চায়েতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বুধবার বেলা ১২টাতেও তালা খোলেনি দোগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েতে অফিসের সামনের চাতালে ঠাঁই বসে রয়েছেন লস্করপুরের আনোয়ার হোসেন। তার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রিয়াজুদ্দিনের একটি শংসাপত্র লাগবে। সেটি দেবেন প্রধান। গত এক সপ্তাহে তিন দিন এসেছেন পঞ্চায়েতে। কিন্তু প্রধানেরই দেখা নেই। ফলে সংশাপত্রও মিলছে না। একই কারণে প্রধানের শংসাপত্র নিতে পঞ্চায়েতে এসেছিলেন নওপাড়ার বাসিন্দা মেনারুল হক। তার ছেলে হাসেন পড়ে সীতারামপুর স্কুলে। তার জন্যই প্রয়োজন শংসাপত্রের।

এ দিন সাড়ে ১১টা নাগাদ দোগাছি পঞ্চায়েত অফিসে এসেছিলেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নীলকুমার রাজবংশী। অফিসের তালা খুলে ঝাঁট দিতে এলেন এক মহিলা। দেখতে দেখতে ততক্ষণে নানা প্রয়োজনে হাজির হয়েছেন হাঁসুপুরের নগেন মণ্ডল, দোগাছির ফুরকিনি খাতুন। ওঁরা ইন্দিরা আবাস যোজনার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না প্রধান না থাকার কারণে। মেডিক্যালে ভর্তির তালিকায় মেয়ের নাম থাকায় প্রধানের শংসাপত্র জরুরি। তা নিতে পঞ্চায়েতে হাজির লস্করপুরের বাগবুল ইসলাম। কিন্তু তিনি সংশাপত্র পাননি। পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট কাজল দাস বলছেন, “জন প্রতিনিধি আসছেন না। কৈফিয়ত দিতে দিতে আমি ক্লান্ত।’’

‘‘৭ সেপ্টেম্বর দোগাছি পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে ও ৮ সেপ্টেম্বর উপ প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আছে। ততদিন দল ভাঙানোর ভয়ে কেউ পঞ্চায়েতমুখো হবেন না।” এমনটাই বলছেন ওই পঞ্চায়েতের এক কর্মী। প্রধান সিপিএমের আনারুল হক টেলিফোনে বলছেন, “আমরা এলাকার বাইরে আছি। অনাস্থার দিন পঞ্চায়েতে যাব। পাছে, তৃণমূল কাউকে ভাঙিয়ে নেয়।’’ তবে তাঁর সাফাই, “আমি না থাকায় মানুষজনের হয়রাণ হওয়ার কথা নয়। কারণ সই করা অনেকগুলি ফাঁকা শংসাপত্র পঞ্চায়েত কর্মীদের দিয়ে এসেছি। তাঁদের বলে এসেছি, লোকজনকে তা দিতে।’’

একই অবস্থা গাজিনগর মালঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতেও। জুলাই মাসে অনাস্থা আসার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রধান দুর্গারাণী সাহা। নিয়ম মতো উপপ্রধান কাজ চালাবেন পঞ্চায়েতের। কিন্তু সে দিন উপ-প্রধান সহ তৃণমূলে যোগ দেওয়া সাতজন সদস্যকে নিয়ে হাওয়া তৃণমূলের নেতারা। বুধবার ওই পঞ্চায়েতে নয়া প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিভা মণ্ডল। কিন্তু নয়া প্রধান নির্বাচনের পরপরই বুধবার বেলা ১টা নাগাদ তালা বন্ধ হয়ে যায় গাজিনগর মালঞ্চা পঞ্চায়েত অফিসে।

অফিসের পাশে দাঁড়িয়েই বাসুদেবপুরের বাসিন্দা মহম্মদ আয়াতুল্লা এ দিন চেঁচিয়ে বললেন , “মা মারা গেছে ৪ জুন । প্রায় ২ মাস থেকে ঘুরছি। প্রধান নেই বলে মৃত্যুর শংসাপত্র পাচ্ছি না।’’ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অফিসেরই এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট তপন কুমার দাস। তিনি বললেন, “জন প্রতিনিধিরা না হলে ভোগান্তি তো হবেই। কীই বা বলব।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাত খান বলেন, “গণতন্ত্রে এটাই তো সবচেয়ে বড় কলঙ্ক। দল ভাঙিয়ে পঞ্চায়েত দখলের ভয়ে আমাদের প্রধান ও সদস্যরাও গোপনে পঞ্চায়েত ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে।’’ তৃণমূলের সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, “পঞ্চায়েত চালু রাখার দায়িত্ব প্রধান, উপ প্রধানদের। সদস্যরা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, তা মানা যায়। কিন্তু যারা প্রধান তাঁরা কেন অনাস্থার ভয়ে পালিয়ে বেড়াবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayet pradhan untraced
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy