দূরপাল্লার রাতের ট্রেনে কোন কামরায় কখন রেল পুলিশ থাকবে বা থাকবে না, সেই খবর আগেভাগেই পৌঁছে যাচ্ছে চোরদের কাছে! কাজ হাসিলের মোক্ষম সময় হিসেবে রাত দু’টো থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সময়কেই বেছে নিচ্ছে তারা।
রেল সূত্রের খবর, ট্রেনের গতি একটু কমলে বা স্টেশনে ঢোকার মুখে সিগন্যালে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়লেই দু’টি কামরার কাপলিং বেয়ে লাইনের উপর নেমে পড়ে চোরেরা। গত বুধবার রাতে ১২৩৭৮ নিউ আলিপুরদুয়ার-শিয়ালদহ ডাউন পদাতিক এক্সপ্রেসে বি-৩ কামড়ায় চোর ধরা পরার পর দেখা মেলেনি রেলপুলিশের। যাত্রীরা বিছানার চাদরে চোরকে বেঁধে মালদহ থেকে শিয়ালদহ নিয়ে আসে
ট্রেনের এক কোচ অ্যাটেনডেন্টের কথায়, ‘‘কিছু দিন আগে আমাদেরই এক সহকর্মীর মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। এই চোরেরা কখনও একা ট্রেনে ওঠে না। অসংরক্ষিত কামরার টিকিট কেটে সাধারণত মালদহ থেকে কয়েক জন এক সঙ্গে ওঠে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেন ফরাক্কা ঢোকার আগে দু'টি কামরার মাঝের যে খোলা অংশ সেখানে পাইপে ভর দিয়ে শরীর গলিয়ে ওরা রেললাইনে নেমে যায়
২০২১ সালের ৩০ অগস্ট প্রায় একই ভাবে ডাউন পদাতিক এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরায় একাধিক যাত্রীর মোবাইল চুরি হয়। যাত্রীরা পাকড়াও করে আল আমিন নামে এক যুবককে। তার কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছিল। পরে তাকে শিয়ালদহ জিআরপি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়
ওই বছর ২২ ডিসেম্বর অসম থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পেশ্যাল সিকিউরিটি গার্ডের এক আধিকারিক কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রেনের চেপে ফিরছিলেন। অভিযোগ, ওই আধিকারিকের আগ্নেয়াস্ত্র চলন্ত ট্রেন থেকে চুরি যায়। পরে নিউ কোচবিহার জিআরপি তদন্ত নেমে অসমের কোকরাঝাড় থেকে তা উদ্ধার ক
২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর আপ পদাতিক এক্সপ্রেসে মালদহ- কিশানগঞ্জের মধ্যে দশটির বেশি মোবাইল ও ব্যাগ চুরি হয়েছিল। চলতি বছরের ১৮ মার্চ ডাউন দার্জিলিং মেলে শিয়ালদহ আসছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বাতানুকূল দ্বিতীয় শ্রেণির কামরা থেকে প্রাক্তন মন্ত্রীর ব্যাগ ও মোবাইল চুরি যায়
আরপিএফের বিভাগীয় নিরাপত্তা কমিশনার (মালদহ) অসীমকুমার কুল্লু বলেন, "রাতে সফরের সময় যাত্রীরা একটু সচেতন থাকলেই চুরি এড়ানো সম্ভব।" রেল যাত্রীদের একাংশের দাবি, উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের কামরায় রাতে পুলিশের দেখা মেলে না। প্রথম শ্রেণির বাতানাকুল কামরাতেও যাত্রীরা সুরক্ষিত নয়। রেল পুলিশের সঙ্গে চোরদের যোগাযোগ না থাকলে এ ভাবে চুরি সম্ভব নয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)