—ফাইল চিত্র
ছট পুজোর ছবি তুলতে গৌরাঙ্গ সেতুর নীচে গঙ্গার ধারে গিয়ে অবাক হয়েছিলেন সুজয় সাহা। নদীর চরায় পালক ফুলিয়ে ঘুরছে শীতের অতিথির দল! ছবি তুলতে এ সব আনাচ-কানাচে নিয়মিত আসতে হয় তাঁকে। কিন্ত তা বলে একেবারে শহরের কাছে শীতের পাখি আগে কোনও দিন দেখেননি। পেশায় শিক্ষক, নেশায় ফটোগ্রাফার সুজয় জানিয়েছেন নবদ্বীপের গঙ্গার চরে স্মল প্রোটিন কোল, স্যান্ড পাইপার, লিটল রিঙ্কড প্লোভারের মতো বেশ কিছু পাখি ওখানে এসেছে এ বার।
এখনই সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও শীত পাখিদের নতুন বসতির খবরে খুশি পাখিপ্রেমীর দল। গত কয়েক বছর ধরে শীতকালে পরিযায়ী পাখির দল ভিড় জমাচ্ছে নবদ্বীপে উত্তর প্রান্তে ছাড়াগঙ্গার তীরে। সেখানেই শেষ হয়েছে নবদ্বীপ পুর এলাকা। নদীর অপর পারে নিদয়া, ইদ্রাকপুর আর মায়াপুরের একাংশ। এই দুই পাড়ের মাঝে বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে গঙ্গার পরিত্যক্ত খাত। কচুরিপানা আর নলখাগড়ার পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর মাছ। জনবিরল এই চরে ভিন্দেশি পাখিদের যাতায়াতের খোঁজখবর এখন অনেকেই রাখেন। বছর পাঁচেক যাবত এখানে শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাচ্ছিল। এ বার নবদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে তাঁদের দেখা যাওয়ায় অনুমান শহরে পরিযায়ীদের নতুন ডেরা হল বোধহয়। এমনিতে নবদ্বীপের পূর্বদিক এবং উত্তর, দক্ষিণের আংশিক গঙ্গা দিয়ে ঘেরা। রয়েছে প্রচুর নির্জন চর। লোকবিরল সেই সব অঞ্চল তাদের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে বুঝে শীতকালীন পাখিরা সেখানেই আসতে শুরু করেছে।
পক্ষীপ্রেমীদের একাংশ জানান, নবদ্বীপের কিছু দূরে পূর্বস্থলীর চুপির চরে এইসব পাখিদের আনাগোনা বহুকালের। মোটামুটি ভাবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি তাদের অবস্থান কাল। চুপি, কাষ্ঠশালির চরে সরকারি উদ্যোগে পাখিরালয় গড়ে উঠতেই পক্ষীপ্রেমীদের তুলনায় পর্যটকের ভিড় বাড়তে লাগল। মানুষের হুল্লোড়ে পাখিরা ছড়িয়ে পড়তে লাগাল আশপাশে। তাদেরই কিছু অংশ কমবেশি তিন কিলোমিটার দূরে নবদ্বীপের নিদয়ার চরে চলে এসেছে আগেই। এ বার তাদের নতুন ঠিকানা গৌরাঙ্গ সেতুর তলা থেকে মহীশুরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সুজয়ের কথায়, “নির্জনতা, চারদিকে প্রচুর গাছপালা আর নদীতে পর্যাপ্ত খাদ্য-মাছ, গেঁড়ি, গুগলি আছে। পাখি এমন জায়গায় পছন্দ করে শীতকালের জন্য। মূলত প্রজননের জন্য আসে ওরা। নবদ্বীপের দক্ষিণ অঞ্চলে এসবই মিলবে। সুতরাং আশা করা যায় কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকা পাখিদের বড় আশ্রয় হয়ে উঠবে।”
পক্ষীপ্রেমীদের একাংশ জানান, নিদয়া এবং গৌরাঙ্গ সেতুর চরে অসপ্রে, কালোমাথা কাস্তেচরা, জলপিপি, চখাচখি, ভুতি হাঁস, বালি হাঁস, রাঙামুড়ি, সরাল, বেগুনি কালেম, কমনকুট, গ্লোসি আইবিস ইত্যাদি পাখি ইতিমধ্যেই নজরে পড়ছে। একাগ্র পাখিচর্চায় ডুবে থাকা সোমনাথ বিশ্বাস বলেন, “এই বছর পাখির সংখ্যা সর্বত্রই প্রচুর। হতে পারে এটা লকডাউন এফেক্ট। তবে নবদ্বীপে পাখির সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। পাখিরা আসেই একটি বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ পেতে। সেই পরিবেশ হয়তো এখানে পাচ্ছে। তাই ইউরোপ থেকে আসা অসপ্রে বা মাছমোড়লের সংখ্যা বাড়ছে নিদয়ার চরে। ওখানে রুডি-শেলডাক বা চখাচখি তিব্বত মালভূমির পাখিও আসছে। পরিযায়ী নয় কিন্তু রাজ্যের অন্য অঞ্চল থেকে স্মল প্রাটিনকোল বা বাবুই বাটানের মতো পাখিও শীতে উড়ে আসছে গঙ্গার চরে।”
ওদের ক্যামেরায় ধরা নবদ্বীপের উত্তর এবং দক্ষিণে ধরা পড়ছে স্মল প্রাটিনকোল, রিভার ল্যাপ উইং, গ্রে হেরন, পার্পল হেরন, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, গ্রিন বি ইটারের দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy