শুভরাজপুর গ্রামে সম্প্রীতির ছবি। — নিজস্ব চিত্র।
মুসলিম প্রধান গ্রাম। সকলেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। গোটা গ্রামে হিন্দু কেবল একটি পরিবার। সদস্য দু’জন, স্বামী এবং স্ত্রী। মুসলিম প্রতিবেশীদের মাঝেই দিব্যি দিন কাটিয়ে দিয়েছেন নদিয়ার থানারপাড়া থানা এলাকার শুভরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা সনৎ মণ্ডল এবং মঞ্জুশ্রী মণ্ডল। শনিবার সকালে মঞ্জুশ্রীর মৃত্যু হয়েছে বয়সজনিত অসুস্থতায়। তাঁর মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করা হয় গ্রামের মসজিদের মাইকে। গ্রামবাসীরাই শেষকৃত্যের আয়োজন করেন। মঞ্জুশ্রীর মৃত্যুতে চোখের জল ফেলেন শাহানারা, মেহেরুন্নিসা, রাজিয়ারা।
শুক্রবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মঞ্জুশ্রী (৬৭)। প্রতিবেশীদের সাহায্যে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। এই খবর গ্রামে এসে পৌঁছয় ভোরবেলায়। রমজান মাসে সেহরীর খাওয়াদাওয়া শেষের পরেই মসজিদের মাইকে মঞ্জুশ্রীর মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করা হয়। তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় ফজরের নমাজের মাঝেই দোয়া পড়েন মসজিদের ইমাম।
মঞ্জুশ্রীর কোনও পুত্রসন্তান ছিল না। তাই গ্রামের যুবকেরা তাঁর শেষকৃত্যের আয়োজন করেন। খবর দেওয়া হয় বৃদ্ধার কন্যা এবং আত্মীয়দের। দুই আত্মীয়ের সঙ্গে গ্রামের দু’জন মুসলমান যুবক রহমান এবং মিলটন তাঁর শবযাত্রায় কাঁধ দেন। বাঁশ কেটে খাটিয়া তৈরি করে বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গার ঘাটে। সেখানে দেহ দাহ করা হয়। মঞ্জুশ্রীর মৃত্যুসংবাদ শুনে যে সব আত্মীয়েরা এসেছিলেন, মসজিদ কর্তৃপক্ষই তাঁদের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করেন।
মঞ্জুশ্রীর স্বামী সনৎ বলেন, ‘‘দেশভাগের পর ১৯৬৪ সালে পূর্ববঙ্গের কুষ্টিয়া জেলা থেকে এই গ্রামে চলে এসেছিলাম। তখন আমার বয়স ১০-১২ বছর। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই গ্রামের লোকজনই আমার আত্মীয়। কখনও মনে হয়নি আমি অন্য ধর্মের। ওঁরা আমাকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন। ওঁদের ঋণ কোনও দিন শোধ করতে পারব না।’’ মঞ্জুশ্রীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রেহেনা বেওয়া। বলেন, ‘‘প্রায় একই সময়ে আমরা বিয়ে হয়ে এই গ্রামে এসেছিলাম। অন্য ধর্মের হলেও আমরা দুই বোনের মতো থাকতাম। বড় বোন চলে গেলে ছোট বোনের কী হয়, তা বুঝতে পারছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy