হরিণদের সঙ্গে সোহরাবুদ্দিন।
বারুদ মাখা হাত ধুয়ে হরিণ-খুরেই জীবন বেঁধেছেন সোহরাবুদ্দিন। আশির দশকের উত্তাল হরিহরপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। দিন দুপুরে মাস্কেট নিয়ে দাপাদাপি, সুতলি বোমা ছোড়াছুড়ি ছিল জলভাত। সেই সময়ে ত্রাসের অপর নাম ছিল সোহরাবুদ্দিন। কয়েক বছর আগেই, যে হাত দিয়ে দিন দুপুরে কিম্বা রাত জেগে বোমার মশলা সুতলি জড়িয়ে বোমা তৈরি করতেন সোহরাবুদ্দিন, এখন সেই হাত দিয়েই হরিণদের জন্য মেখে দেন বিচুলি, খেতের কাচা ঘাস। যে হাত দুটোই সমানে চলত গুলি ছোড়া, নিমেশেই ‘টপকে’ যেত প্রতিপক্ষ, সেই হাত দিয়েই হরিণ ও তার শাবকদের পিঠে হাত বুলিয়ে দেন তিনি। যে হুঙ্কারে শিশুরা তো দূর অস্ত,ছেলে বুড়ো সকলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত, তাঁর সেই গলার স্বরেই এক ডাকে আটত্রিশটি হরিণ জড়ো হয় খাবার জায়গায়। যে সোহরাবুদ্দিনকে নাগালের মধ্যে পেয়েও তাড়া করে ধরতে পারেনি পুলিশ সেই এখন হরিণের খুরের সাথে বাঁধা পড়েছেন ওতপ্রোতভাবে।
সোহরাবও বলছেন, "একটা সময় কিভাবে জীবনের কয়েকটা বছর নষ্ট করেছি ভেবেই খারাপ লাগে। যে কটা দিন বাঁচব হরিণের সঙ্গেই কাটাব।"আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নম্বইয়ের শুরুর দিকের সেই ত্রাস সোহরাবুদ্দিন এখন হরিহরপাড়া থানার চন্দ্রদ্বীপ হরিণ উদ্যানের আটত্রিশটি হরিণের দু'বেলা খাবার দেওয়া, তাদের যত্ন-আত্তি করার দায়িত্বে। হরিণ অসুস্থ হলে তাদের সুস্থ করে তোলা সবই নিজে হাতে করেন তিনি। এখন হরিণ শাবকেরাও তাঁর হাতে ধরা দিতে ভয় পায়না।
১৯৯৯ সালে দুটো হরিণ দিয়ে পথ চলা শুরু হয় চন্দ্রদ্বীপ হরিণ উদ্যানের। তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার সৌমেন মিত্র হরিণের দেখভালের দায়িত্ব দেন সোহরাবুদ্দিনকে। সেই থেকে আর হরিণের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। এদিকে ক্রমেই বেড়ে চলেছে হরিণের সংখ্যা। তবুও হরিণের ভালোবাসায় নামমাত্র সাম্মানিকেই সন্তুষ্ট তিনি। পুলিশের কর্তারা বলেন, " সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতেই হরিণ দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় সোহরাবুদ্দিনকে। " আর তার পরেই বদলে গিয়েছেন তিনি। মাঝে মধ্যেই খুন-খারাপি,চুরি, ছিনতাই - তার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়েই ১৯৯২ এর ২ নভেম্বর বিডিও অফিস চত্বরে পুলিশের গুলিতে খুন হন সাত জন নিরীহ মানুষ। তৎকালীন পুলিশের কর্তারা সোহরাবুদ্দিনকে সে কথা বোঝাতেই সম্বিত ফেরে তারও। আর এ ভাবেই বারুদের উত্তাপ হারিয়ে গিয়েছে হরিণ-খুরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy