Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘তুই সিরাজ না?’, ত্রাণের প্যাকেট এগিয়ে দিতেই কৈশোরের চেনা মুখ

সেই বন্ধুরা একে অন্যকে দেখে সামাজিক দূরত্ব বিধি ভুলে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও থমকে গিয়েছেন।

বন্ধুরা মিলে ত্রাণে। নিজস্ব চিত্র

বন্ধুরা মিলে ত্রাণে। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৫:০৬
Share: Save:

মাধ্যমিকের পর দু-দুটো যুগ ভেসে গিয়েছে। পেশার টানে ছিটকে গিয়েছে সেই সব পুরনো মুখ, টিফিনের ছায়ায় কুলের আচার ভাগ করে খাওয়া সহপাঠী, সিগারেটে প্রথম সুখটানের বন্ধু। করোনা-অতিমারী ২৪ বছর পর সেই সব মুখগুলোকেই এক জায়গায় টেনে হিঁচড়ে যেন জড়ো করে দিয়েছে। চুলে পাক ধরা চিনতে না পারা সেই সব মুখের ভাঁজে পুরনো দিন খুঁজে পেয়েই তাই পরস্পর চমকে উঠেছেন তাঁরা, ‘কী রে চিনতে পারছিস!’

ডোমকলের কুশাবাড়িয়া হাইস্কুলের সেই বন্ধুরা একে অন্যকে দেখে সামাজিক দূরত্ব বিধি ভুলে জড়িয়েও ধরতে গিয়েও থমকে গিয়েছেন। তার পর কেউ দিয়েছেন অর্থ কেউ বা বাড়ির চাল-ডাল-আলু। আর সেই সব নিয়ে নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতে গিয়ে অবাক হয়ে আবিষ্কার করেছেন এক সঙ্গে মাধ্যমিক দেওয়ার পরে অনটনে ছিটকে যাওয়া অন্য এক বন্ধুকে। যাঁদের হাতে সাহায্যের থলিটা তুলে দিতে গিয়ে থমকে গিয়েছেন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক রাজেশ কর, ব্যবসায়ী বিকাশ দাস, মুরসেলিম বিশ্বাসেরা। চোখের কোণে জমে উঠেছে জল।

দিন কয়েক আগে, চাল, ডাল, আলুর প্যাকেট নিয়ে ডোমকলের বাগডাঙা এলাকায় এ পাড়া- সে পাড়া ঘুরছিলেন কুশাবাড়িয়া স্কুলের ১৯৯৬ সালের মাধ্যমিক ব্যচের একদল সময়-ছুট বন্ধু। অসহায় মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন তাঁদের সংগ্রহ করা ত্রাণ। সেই অসহায় মানুষের ভিড়ে মুখে গামছা বেঁধে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সিরাজ আলি। থলিটা হাতে তুলে দিতে গিয়েই থমকে যান রাজেশ। কাঁপা কাঁপা গলায় জানতে চান, ‘‘চেনা লাগছে, তুই সিরাজ না?’’ সিরাজ মুখ থেকে গামছা নামাতে পারেননি, কোনক্রমে মাথা নেড়ে ত্রাণের থলেটা নিয়ে সরে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে শুধু বলে গিয়েছিলেন, ‘‘তা-ও ভাল, চিনতে পারলি অন্তত!’’

রাজেশ বলছেন, ‘‘আমরা ক’জন পুরনো বন্ধ যোগাযোগ করে এই অসময়ে কিছু করার পরিকল্পনা করেছিলাম। আর সেই পুরনো যোগাযোগের মধ্যেই খোঁজ পেয়ে গেলাম সিরাজের।’’

কুশাবাড়িয়ার আবলেস রহমানের সঙ্গে সেই মাধ্যমিক পরীক্ষার পর দেখা হয়নি বাগডাঙা এলাকার মুরসেলিম বিশ্বাসের। সে দিন ত্রাণের ভিড়ে তাঁকেও খুঁজে পেয়েছেন চালের কারবারি মুরসালিম, বলছেন, ‘‘প্রথমে চিনতেই পারিনি, চোখাচোখি হতেই থমকে গিয়েছিলাম দু’জন। মনে হচ্ছিল অনেক কথা জমে আছে। কিন্তু ওই জনতার ভিড়ে তা আর হল না।’’ সিকি শতাব্দী আগে, সে সময় এলাকার সব থেকে পুরানো স্কুল ছিল কুশাবাড়িয়া হাই স্কুল। এলাকার বাইরে থেকে সেখানে সাইকেলে কিংবা পায়ে হেঁটে পড়তে আসত দূর দূরান্তের ছেলেপুলেরাও। এলাকার বাগলপাড়া গ্রামের আদি বাসিন্দা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আমানুল হক। তিনি বলছেন, ‘‘আমরা যারা কিছুটা প্রতিষ্ঠিত, এমন জনা কয়েক বন্ধু মিলে ভেবেছিলাম কিছু একটা করা দরকার। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা নিছক সৌজন্য নয়, প্রয়োজন। তা বলে তা করতে গিয়ে হারানো মুখ ভুলে যাওয়া সময়টা এ বাবে খুঁজে পাব ভাবিনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy