কমেই চলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা। — ফাইল চিত্র।
নজিরবিহীন ভাবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে চলেছে এ বারের মাধ্যমিকে।
গোটা রাজ্যে যেখানে সার্বিক ভাবে গত বারের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কম, নদিয়া জেলায় সেই কমতির পরিমাণ ৫৬ শতাংশেরও বেশি। নদিয়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, “২০২২ সালে নদিয়া থেকে ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে ৬৬৫২৪ জন পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। এবারে সেখানে পরীক্ষা দিতে চলেছে ২৯০৪৮ জন। শতাংশের হিসাবে ৫৬.৩৩ কম পরীক্ষার্থী এবারে মাধ্যমিক দিতে চলেছে জেলা থেকে।” অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বার নদিয়া জেলা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা কম দিচ্ছে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৭৪৭৬ জন।
জানা গিয়েছে, গোটা রাজ্যে এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে কয়েক লক্ষ কমেছে। এ প্রসঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ মনোনীত নদিয়া জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা আহ্বায়ক রমেন ঘোষ বলেন, “এ বার ফর্ম ফিল-আপের সময়ে জানা গিয়েছিল মাত্র ৪২৪৪৮ জন পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। তার মধ্যে কম-বেশি ৩০ শতাংশ পড়ুয়া পরীক্ষা দিচ্ছে না।”
কিন্তু কেন এমন ভাবে মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেল এবারে? শিক্ষামহল এর জন্য একাধিক কারণ নির্দেশ করেছেন। মাধ্যমিকে নবদ্বীপের সেন্টার সেক্রেটারি তথা আর সি বি সারস্বত মন্দিরের প্রধান শিক্ষক বিজনকুমার সাহা বলেন, “এ ভাবে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার জন্য বয়স সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকার ভূমিকা রয়েছে। ২০১৭ সালে একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলে ছ’বছরের কমে প্রথম শ্রেণিতে এবং ১০ বছরের কমে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো যাবে না। ফলে, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলে বহু পড়ুয়ার ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। ওই পড়ুয়ারাই এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। ঘাটতির পিছনে এটা একটা বড় কারণ।”
এ ছাড়া অতিমারি জনিত কারণে বিরাট সংখ্যক পড়ুয়া স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধানেরা। করোনা কালে ভেঙে পড়া আর্থিক অবস্থা সামাল দিতে বহু পরিবারের স্কুল পড়ুয়া ছেলে উপার্জনে নেমে পড়েছে। এদের অনেকেই বাবা-কাকার হাত ধরে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে চলে গিয়েছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিরাট অংশের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছেন বাবা-মা। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সে নাবালিকা বিয়ে হয়েছে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকেরা অনুপস্থিত পড়ুয়ার বাড়ি গিয়ে এমনই তথ্য পেয়েছেন, জানাচ্ছেন দেপাড়া বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত ভট্টাচার্য।
নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুখেন্দুনাথ রায় বলেন “পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল না থাকায় পড়ুয়ারা পড়াশোনার প্রতি গুরুত্ব কম দিচ্ছে। নবম শ্রেণিতে উঠে সেই ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই অকৃতকার্য হচ্ছে। যার প্রভাব মাধ্যমিক পরীক্ষায় সরাসরি পড়ছে।”
পাশাপাশি, জেলা জুড়ে বেড়ে চলা বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা এবং তাদের প্রতি এক শ্রেণির অভিভাবকের আকর্ষণের কারণে মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী কমছে। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “যত দিন যাচ্ছে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে ভর্তির সংখ্যা কমছে। বেসরকারি স্কুলের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন অভিভাবক। মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী কমার পিছনে এটাও গুরুত্বপূর্ণ কারণ।”
জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা আহ্বায়ক রমেন ঘোষ জানিয়েছেন, স্কুলের মাধ্যমে বহু পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ফর্ম ফিল-আপ করানো হয়েছে। সোমবার বোর্ডের তরফে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “যারা নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে ফর্ম ফিল-আপ করতে পারেনি, কিন্ত এখন পরীক্ষা দিতে চাইছে, তাদের সরাসরি পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে কিছু করা যায় কিনা, সে চেষ্টাও চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy