Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

Coronavirus in West Bengal: অন্যের পরা লাইফ জ্যাকেটে করোনা ধরবে না?

রাস্তা এখনও কাঁচা। বর্ষায় তা কাদায় ঢেকে যায়। তা ঠেলেই নদী পর্যন্ত পৌঁছতে হয় গাড়িগুলিকে। এতে ঝুঁকি থেকেই যায় বলেই দাবি স্থানীয়দের।

গায়ে নেই লাইফ জ্যাকেট। শান্তিপুরের কালনাঘাটে।

গায়ে নেই লাইফ জ্যাকেট। শান্তিপুরের কালনাঘাটে। নিজস্ব চিত্র ।

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৩৯
Share: Save:

বর্ষার শেষ লগ্নে ভরা গাং। পিছল ঘাট, নৌকায়-ভেসেলে গাদাগাদি। একটু অসতর্কতায় ডুবতে পারে তরী। লাইফ জ্যাকেট রয়েছে গায়ে? কতটা বাঁধা আছে নিরাপত্তার আটঘাট? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।

অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে চলেছে।

তার মধ্যেই পরিবার নিয়ে কোনও মতে লঞ্চ থেকে নেমে জেটিতে পা রেখেই শান্তনু বিশ্বাস শুনলেন— “দাদা, লাইফ জ্যাকেটটা পড়েননি?”

প্রশ্ন শুনে একটু থমকে দাঁড়ালেন শান্তনু, তার পর বললেন, “এই সময়ে জ্যাকেট থেকে করোনা সংক্রমনের ভয় আছে। বোঝেনই তো সব। কী আর করব?”

শুধু তিনি নন অবশ্য। শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ঘাট থেকে পূর্ব বর্ধমানের কালনা ঘাটে চলাচলকারী ফেরি বা শান্তিপুর থেকে হুগলির গুপ্তিপাড়া ঘাটের মধ্যে চলাচলকারী ফেরিঘাটে ছবিটা একই। লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই পারাপার করছেন যাত্রীরা।

পাঁচ বছর আগের ভয়াবহ স্মৃতি কিন্তু এখনও টাটকা অনেকের কাছেই। নৌকাডুবি হয়ে বিশেরও বেশি প্রাণ গিয়েছিল ভাগীরথীর গর্ভে। নৃসিংহপুর ঘাট থেকে ও পারে কালনা ঘাটের মধ্যে সংযোগকারী ফেরির সেই দুর্ঘটনার ক্ষত শুকায়নি এখনও অনেক পরিবারেই। সেই দুর্ঘটনার পর অবশ্য ফেরিঘাটের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে।

শান্তিপুর শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চর সূত্রাগড়ের ঘাটের সঙ্গে যোগাযোগ ও পারে হুগলির গুপ্তিপাড়ার, আবার গ্রামীণ শান্তিপুরে হরিপুর পঞ্চায়েতের নৃসিংহপুর ঘাটের সঙ্গে যোগাযোগ ও পারে পূর্ব বর্ধমানের কালনার। দুই ফেরিঘাটেই লঞ্চের পাশাপাশি রয়েছে ভেসেল। ভেসেলে নানা পণ্যবাহী এবং যাত্রিবাহী গাড়ি নদী পারাপার করে। মোটামুটি সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল করে।

গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে রয়েছে দু’টি ভেসেল এবং দু’টি লঞ্চ। নৃসিংহপুর ঘাটে রয়েছে তিনটি ভেসেল এবং চারটি লঞ্চ। এর মধ্যে দু’টি ভেসেল এবং তিনটি লঞ্চ এখন চালু আছে। চাল থেকে শুরু করে মাছ, আনাজ, গবাদি পশুর খাদ্য এ পার ও পার পাড়ি দেয়। অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজে যেতে, ব্যবসায়িক দরকারেও দুই পারের মানুষ নিত্য ব্যবহার করেন এই ফেরি। জলযানে ওঠার জন্য রয়েছে পাকাপোক্ত জেটি। নজরদারির জন্য দুই ঘাটেই রয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। জেটিতে এবং আশপাশে রয়েছে আলোর ব্যবস্থাও।

কিন্তু দুই ঘাটেই গিয়ে দেখা গেল, যাত্রীদের গায়ে নেই লাইফ জ্যাকেট। কর্তৃপক্ষের দাবি, জলযানে লাইফ জ্যাকেট থাকলেও সংক্রমণের কথা বলে তা এড়াচ্ছেন যাত্রীরা। কালনা থেকে শান্তিপুরে বাপের বাড়ি ফেরার পথে কল্পনা দে বলেন, “এই জ্যাকেট একটু আগে অন্য এক জন পড়েছে, সেটা আমি এখন পড়ি কী করে? সংক্রমণের ভয় নেই?” ব্যবসার কাজে শান্তিপুর থেকে গুপ্তিপাড়া যাওয়ার পথে বাবলু দাস বলেন, “জ্যাকেট পড়লে জলে ড়োবার ঝুঁকি কমবে। কিন্তু সংক্রমণের ঝুঁকিও তো বাড়বে।”

তবে সংক্রমণের ঝুকি তো দেখা দিয়েছে গত বছর থেকে। এর আগেও বারবার যাত্রীদের দেখা গিয়েছে লাইফ জ্যাকেট না পরে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে। নৃসিংহপুর কালনা ফেরিঘাটের ম্যানেজার জয়গোপাল ভট্টাচার্য বা শান্তিপুর গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটের ইজারাদার বিকাশ সাহারা বলছেন, “নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয়, সবই করা হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণের কথা বলে যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট পড়তে চাইছেন না।” তবে দুই ঘাটেই জলযানে রয়েছে রবার টিউব।

দু’টি ঘাটেই ভেসেলে ওঠার রাস্তা এখনও কাঁচা। বর্ষায় তা কাদায় ঢেকে যায়। তা ঠেলেই নদী পর্যন্ত পৌঁছতে হয় গাড়িগুলিকে। এতে ঝুঁকি থেকেই যায় বলেই দাবি স্থানীয়দের। এই পথ অন্তত কংক্রিটের করার দাবিও জানাচ্ছেন তাঁরা। কালনা নৃসিংহপুর ফেরিঘাটের দায়িত্ব রয়েছে কালনা পুরসভার হাতে। পুর প্রশাসক আনন্দ দত্ত বলেন, “সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন আছে তেমনই লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পারাপার ঝুঁকির। দু’টি বিষয়ই মাথায় রাখতে হচ্ছে। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আরও তিন সেট লাইফ জ্যাকেট চেয়ে পাঠিয়েছি।” গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাট রয়েছে শান্তিপুর পুরসভার দায়িত্বে। পুর প্রশাসক সুব্রত ঘোষ শুধু বলেন, “ফেরিঘাটের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy