তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের পর এবার 'ভুয়ো ভোটারের' তালিকায় উঠে এল সস্ত্রীক তৃণমূল নেতার নাম। ওই নেতা আবার পুরসভার সদস্য। এক পুরসভার বাসিন্দা হয়ে অন্য পুরসভা এলাকার তথা শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় ভোটার তালিকায় নাম থাকা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই বিষয়টি সামনে এনে ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুর চড়িয়েছে বিজেপি।
চাকদহ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুর সদস্য তৃণমূলের সত্যজিৎ বিশ্বাস ওরফে সাধন। নিজের পুরসভা এলাকায় ভোটার তালিকায় তাঁর নাম থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চাকদহের পাশাপাশি সত্যজিতের নাম রয়েছে রানাঘাট পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। শুধু ওই পুরসদস্য নন। রানাঘাট শহরের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, ওই তৃণমূল নেতার স্ত্রী শম্পা বিশ্বাসেরও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্যজিতের শ্বশুরবাড়ি রানাঘাটের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে।
এই ঘটনা সামনে আসার পর চাকদহের পুরসদস্য ও তাঁর স্ত্রী বর্তমানে রানাঘাট পুরসভা এলাকার 'ভূতুড়ে' ভোটার বলেই দাবি করেছে বিজেপি। দুই জায়গায় ভোটার তালিকায় নাম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন সত্যজিৎ। তাঁর দাবি, "আমি চাকদহ শহরের বাসিন্দা। এই শহরেই জন্ম। শ্বশুরবাড়ি রানাঘাটে। ২০১৩ সালের আগে পারিবারিক সমস্যার কারণে স্ত্রীকে নিয়ে রানাঘাটে স্থায়ী ভাবে থাকতাম। সেই সময় চাকদহ থেকে ভোটার কার্ড রানাঘাটের ঠিকানায় স্থানান্তর করি। ২০১৩ সালের পর স্ত্রীকে নিয়ে চাকদহে ফিরে আসি। তখন রানাঘাট থেকে ভোটার কার্ড ফের চাকদহ স্থানান্তর করাই।" তাঁর দাবি, "কোনও ভাবেই রানাঘাটের ভোটার তালিকায় আমার নাম থাকার কথা নয়। ওই ঠিকানায় যে এখনও নাম রয়ে গিয়েছে তা সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকেই জানলাম। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশন।"
জানা গিয়েছে, চাকদহ শহরে তৃণমূলের দাপুটে নেতা বলে পরিচিত রয়েছে সত্যজিতের। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণের জন্য যখন বুথ স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। তখন একজন পুর সদস্য তথা তৃণমূল নেতার নাম রানাঘাট ও চাকদহ শহরের ভোটার তালিকায় থাকার বিষয়টি সামনে আসায় সরব হয়েছে বিজেপি। নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তৃণমূল নিজেরাই 'ভূতুড়ে ভোটার' ধরতে গিয়ে সত্যিটা সমানে চলে আসছে। এই ভোটাররাই এতদিন ভোট দিয়ে তৃণমূলকে জিতিয়েছে। ভূতুড়ে ভোটার ছাড়া যদি ২০২৬-এর নির্বাচন হয় তাহলে নিশ্চিত তৃণমূলের হার হবে।"
রানাঘাটের পুরপ্রধান তথা রানাঘাট পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরসদস্য তৃণমূলের কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কোনও ব্যক্তির দুই জায়গায় নাম থাকাটা কাম্য নয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নাম তিন জায়গায় ভোটার তালিকায় থাকার বিষয়টিও সামনে এসেছে। নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাই এ জন্য দায়ী। আমরা যে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য তালিকা তৈরি করেছি, তাতে বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রীর নাম রয়েছে। তবে এক সময় তাঁরা রানাঘাটের বাসিন্দা থাকলেও দীর্ঘদিন এখানে তাঁরা ভোট দিতে আসেননি।"
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)