ফাইল চিত্র।
বারবার সিম বদলেছেন সুতপা চৌধুরী। ব্লক করেছেন সুশান্ত চৌধুরীর ফোন। তাতেও কিন্তু থামানো যায়নি সুশান্তকে। বারবার সে নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছে সুতপাকে। এই অভিযোগ করেছেন স্বয়ং সুতপার বাবা স্বাধীন চৌধুরী। তাঁর কথায়, এতটাই উত্ত্যক্ত করত সুশান্ত যে, মেয়েকে তিনি ঘরের কাছে কলেজে ভর্তি না করে পাঠিয়েছিলেন বহরমপুরে। তার পরেও নিস্তার মেলেনি। গত কয়েক মাসে পাঁচ বার সিম বদলেছিলেন সুতপা। তবু বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করত সুশান্ত, অভিযোগ স্বাধীনের।
বুধবার দুপুরে বৈষ্ণবনগরের মহারাজপুরের সুতপাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, একটি প্লাস্টারহীন ঘরের বারান্দায় পেতে রাখা মাদুরে বসে বাবা স্বাধীন চৌধুরী অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশের দিকে। বড় মেয়ের কথা উঠতেই কেঁদে ফেললেন তিনি। বললেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে ওই যুবক আমার মেয়েকে খুবই উত্ত্যক্ত করছিল। রেহাই পেতেই মেয়েকে বহরমপুর গার্লস কলেজে ভর্তি করেছিলাম।’’ যদিও তাতে রেহাই মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে মেয়ের উপর ওই যুবক আরও চাপ সৃষ্টি করে। বাধ্য হয়ে পাঁচ বার মেয়ের মোবাইল ফোনের সিম বদল করতে হয়। সুশান্তের নম্বর ব্লকও করা হয়। কিন্তু তার পরেও মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।’’
সুতপার নতুন নম্বর কোথা থেকে পেত সুশান্ত? স্বাধীনের অভিযোগ, ‘‘শুনেছি মেয়ের এক বান্ধবীকে ‘বোন’ পাতিয়েছিল সুশান্ত। তাঁর কাছ থেকে মেয়ের সব খবর নিত সে। তাই ফোনের সিম বদল করলেও সেটা সহজেই জেনে যেত।’’ সুতপার বাবার আরও দাবি, মেয়ে মালদহে এলে কখনওই তাঁকে একা ছাড়া হত না। তিনি বা তাঁর স্ত্রী, কেউ না কেউ সঙ্গে যেতেন। স্বাধীন বলেন, ‘‘জুলাই মাসেই মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। ঠিক করেছিলাম, তার পরে ওকে মালদহে বিএড কোর্সে ভর্তি করে দেব। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি করে দেব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল!’’
সুশান্তের ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে, রীতিমতো প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে জনৈকা ‘ম্যাডামজি’কে। দফায় দফায় প্রেম ভেঙে যাওয়া, কারও প্রতি বিশ্বাস ভেঙে যাওয়া নিয়ে পোস্ট রয়েছে। যাঁরা মেয়ের প্রেমিকের কথা না শুনে সম্পর্ক শেষ করে দেয়, তাদের প্রতি কুকথাও বলা হয়েছে একটি পোস্টে। তার পরেও কেন সুশান্তের বিরুদ্ধে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি পরিবার? মৃতার বাবার দাবি, মামলা-মোকদ্দমা করে কোনও ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাননি তাঁরা। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। ওই ছেলেকে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরামর্শও দিয়েছিলেন তাঁরা।
সুতপার মা-ও থেকে থেকে কেঁদে ফেলছেন। এক আত্মীয় এলেন বাড়িতে। তাঁর হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। বললেন, ‘‘পায়েস খুব ভালবাসত। শেষ বার পায়েস করে দিয়েছিলাম। বহরমপুরে গিয়ে একটু খেয়ে বাকিটুকু মেস মালিকের ফ্রিজে রেখেছিল।’’ আবার একটু নীরবতা। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘যদি জানতাম এমন কিছু ঘটতে চলেছে, তা হলে কি আর যেতে দিতাম!’’
সুতপার পরিজনেরা জোরের সঙ্গে বারবার একটাই কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, সুতপা বা সোনাইকে (এই নামেই মেয়েটি পরিচিত ছিলেন তাঁর গ্রামে) যে এই ভাবে খুন করল, তার ফাঁসি চাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy