আজ-মহরম: সেজেছে ইমামবাড়া। কিন্তু করোনা আবহে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
গত বছরেরই কথা, নবম মহরমের দিন সন্ধ্যায় ঠিক সাতটা বাজতে না বাজতেই হাজারদুয়ারির পিছনের একটি বাড়িতে জড় হয়েছিল জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কাতারে কাতারে মানুষ। এর মাঝে গনগনে কাঠ কয়লার আঁচের উপর দিয়ে একের পর এক হেঁটে চলেছেন মহরম পালন করা মানুষ। কিন্তু এই বছর বদলে গেল সেই চেনা দৃশ্য।
প্রায় ক'য়েকশো বছর ধরে হয়ে আসা আগুনের মাতম এই বছর করোনা আবহে বন্ধ থাকল। হল না অষ্টম মহরমের জুলুস ‘সদ্যা’। এমনকি নবম মহরমের জুলুস ‘মান্নতি আলমও’ও এই বছর বন্ধই থাকল। যদিও হয়নি পঞ্চম মহরমের জুলুস ‘তাবুদ’ ও ষষ্ঠ মহরমের জুলুস ‘মেহেদী’।
প্রতি বছর নবম মহরমের দিন জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সাধারণ মানুষ লালবাগের ইমামবাড়ায় আসেন মহরম পালন করতে। যদিও এই বছর তা আর হয়নি। লালবাগ ইমমবাড়া সূত্রে খবর, সকাল থেকে কিছু লোকজন আসলেও তাঁদের থার্মাল স্ক্রিনিং করে ভাল করে স্যানিটাইজ় করে তার পরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। তাও অন্য বছরের মতো এই বছর ইমামবাড়ার ভিতর বেশিক্ষণ থাকতে দেওয়া হয়নি তাঁদের।
এ দিন সমস্ত রীতিই পালন করা হয়েছে ইমামবাড়ার ভিতরে। যদিও সারা বছর ইমামবাড়ায় সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে। শুধু প্রথম মহরম থেকে দশম মহরম পর্যন্ত সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় ইমামবাড়ার দুয়ার। উত্তরপূর্ব ভারতের সব থেকে বড় এই দশ দিনই মানত করা ও পুজো পাঠের সুযোগ মেলে। লালবাগে ইমমবাড়ায় মহরম পালন করা হয় ৬০ দিন ধরে বের হয় বিভিন্ন জুলুস। যদিও নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার নাতি তথা ছোটে নবাব সৈয়দ রেজা আলি মির্জা বললেন, ‘‘আমার দাদু ওয়াসেফ আলি মির্জার সময়ও মহরমের জুলুসে হাতি ঘোড়া সাজিয়ে বের করা হত। এখনকার জুলুসের সঙ্গে তখনকার জুলুসের বিস্তর ফারাক রয়েছে। কিন্তু এই বছর করোনা আবহে কোনও জুলুসই হয়নি। এই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল।’’
ইতিহাসবিদদের মতে, ১৮৭৪ সালে নবাব ফেরদুন জাঁ ছয় লক্ষ মুদ্রা ব্যয় করে ২০৭ মিটারের এই ইমামবাড়া নির্মাণ করান। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রাজর্ষি চক্রবর্তীর মতে, ‘‘একমাত্র লালবাগের এই ইমামবাড়াতেই রয়েছে হজরত মহম্মদের জামাতা হজরত আলির হাতের সহি করা কোরান শরিফ। যদিও সর্ব সাধারণ তা দেখার সুযোগ পান না।’’ নবাব ফেরদুনজা ইমামবাড়া নির্মাণ করার পর থেকেই বাড়ে মহরমের জৌলুস, এমনটাই দাবি ইতিহাসবিদদের। এ দিন রাজর্ষি বলেন, ‘‘লালবাগের মহরমের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এখানে ৬০ দিন মহরম পালন করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy