Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Satyajit Biswas Murder

খুন করেও ছাড়া পেয়ে গেল? প্রশ্ন সন্তানহারা মায়ের

ধবার বিশেষ আদালত দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করলেও বিজেপির তৎকালীম বিধায়ক ও সাংসদ, যথাক্রমে মুকুল রায় ও জগন্নাথ সরকার বেকসুর খালাস হয়েছেন।

সত্যজিৎ বিশ্বাসের মা। নদিয়ার হাসখালিতে ।

সত্যজিৎ বিশ্বাসের মা। নদিয়ার হাসখালিতে । ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৩
Share: Save:

টিনের ঘরের একটা দেওয়ালে ঝুলে আছে শ’খানেক নানা আকৃতির দলীয় ব্যাজ। তাতে মাখামাখি ঝুল আর ধুলো। সত্যজিতের শেষ স্মৃতিচিহ্ন। তার পাশেই এখনও লম্বা করে টাঙানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। সেই ছবিরও একই অবস্থা।

কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তথা নদিয়া জেলা যুব তৃণমূলের দাপুটে সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাসের কার্যালয় ছিল এই ঘরটাই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লোকের ভিড়ে তা গমগম করত। উঠোনের একপাশে সত্যজিতের স্মৃতি নিয়ে এখনও সেই ঘর দাঁড়িয়ে। ভিতরে ঝুপসি অন্ধকারে কাঠের টেবিলের উপর পুরু ধুলোর স্তরের মধ্যেই অযত্নে পড়ে তাঁর কালো হেলমেট। সবুজ প্লাস্টিকের চেয়ারের উপরেও সেই ধুলোর আস্তরণ। সর্বত্রই এক অনুপস্থিতি বড় প্রকট।

সত্যজিৎ খুনের পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। বুধবার বিশেষ আদালত দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করলেও বিজেপির তৎকালীম বিধায়ক ও সাংসদ, যথাক্রমে মুকুল রায় ও জগন্নাথ সরকার বেকসুর খালাস হয়েছেন। টিনের ঘরটার সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁসে ওঠেন সত্যজিতের মেজো ভাই সুজিত— “সাংসদ বলেই কি জগন্নাথ সরকার পার পেয়ে গেল? ওই তো খুনের মাস্টারপ্ল্যান করেছিল, ফোনের সূত্রে সেই প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।” সত্যজিতের মা অঞ্জনাও বলেন, “জলজ্যান্ত ছেলেটাকে সবার সামনে খুন করেও ওরা ছাড়া পেয়ে গেল? এ কেমন বিচার?”

তবে এককালে তৃণমূলের অন্যতম সেনাপতি মুকুলের প্রতি তাঁদের মনোভাব সম্পূর্ণ বিপরীত। সুজিতের দাবি, “মুকুল রায় কোনও ভাবেই এতে যুক্ত ছিলেন না। উনি দাদাকে খুবই স্নেহ করতেন। ওঁর নামটা মামলায় ঢুকিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত।” সত্যজিতের মৃত্যুর পরে, ওই বছরেই লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্রে তাঁর স্ত্রী রূপালী বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। বিজেপির জগন্নাথ সরকারের কাছে তিনি হেরে যান।রূপালী এ দিন বলেন, “সিআইডি-র তদন্তের উপর ভিত্তি করেই আদালত রায় দিয়েছে। জগন্নাথ সরকারেরা কেন ছাড় পেল, সেটা বৃহস্পতিবার সিআইডি-র সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করব।”

ঘটনার রাতে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সত্যজিতের ছায়াসঙ্গী মিলন সাহা। সে দিনের ঘটনা এখনও তিনি গড়গড় করে বলে যান। এই মামলার অন্যতম প্রধান সাক্ষীও তিনি। সাজা ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এখনও বিশ্বাস করেন যে এই খুনের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির যোগ ছিল। শুধু অভিজিৎ পুন্ডারি ও সুজিত মণ্ডল এই পরিকল্পনা করেনি। বিশেষ করে সত্যজিতের মৃত্যুর পরেই কৃষ্ণগঞ্জে বিজেপির উত্থানে এই বিশ্বাস আরও সার-জল পেয়েছে।

এ দিন দোষী সাব্যস্ত দু’জনের অন্যতম অভিজিৎ পুন্ডারির বাবা অজিত বা মা ঝর্না পুন্ডারি দুপুর পর্যন্ত রায়ের কথা জানতেন না। ঝর্না দাবি করেন, “আমার ছেলে কোনও দিন এই কাজ করতে পারে না। ওকে ফাঁসিয়ে আসল অপরাধীদের আড়াল করা হল।” আর এক অপরাধী সুজিত মণ্ডলের মা অসুস্থ, মেয়ের কাছে থাকেন। তাঁদের ঘরে তালা দেওয়া।

সত্যজিতের মৃত্যুর পরে রূপালী হাঁসখালির দক্ষিণপাড়া রাধাসুন্দরী পালচৌধুরী বিদ্যাপীঠে করণিকের চাকরি পেয়েছেন। ওই স্কুলেই করণিকের চাকরি করতেন সত্যজিৎ। কিন্তু রূপালী বর্তমানে নাবালক ছেলেকে নিয়ে তেহট্টের হরিপুরে বাপের বাড়িতে থাকেন। সেখান থেকেই স্কুলে যাতায়াত করেন। সত্যজিতের মা অঞ্জনা বলেন, “নাতিটা একেবারে সত্যর মতো দেখতে হয়েছে। ওকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

satyajit biswas TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE