শিক্ষক জহিরুদ্দিন সেখের মা জোবেদা বিবি। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির বাইরে যেন অঘোষিত কার্ফু জারি হয়েছে। বিকেল থেকে ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ। ভিতরে যে মানুষজন আছেন, তা বোঝা যাচ্ছে ঘরে আলোর বিচ্ছুরণ দেখে। সন্ধ্যায় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ওই বাড়ির সামনে কৌতূহলী মানুষজনের ভিড়। তাঁদের মধ্যে গুঞ্জন, এ বাড়ির ছেলে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। টাকা দিয়ে চাকরি করে আজ গ্রেফতার হয়েছে। এ সব শুনে ফুঁসে উঠেছেন এক বৃদ্ধা। সোমবার আলিপুর নগর দায়রা আদালত যে চার প্রাথমিক শিক্ষককে বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক জনের মা তিনি। নাম জোবেদা বিবি।
তাঁর ছেলের নাম সিবিআইয়ের চার্জশিটে আছে। অভিযোগ, চাকরির জন্য তিনি মোটা টাকা দিয়েছেন। কিন্তু জহিরুদ্দিন শেখের মা জোবেদা বলছেন, ‘‘চাকরির জন্য ও কাউকে টাকা দিয়েছে কি না বলতে পারব না।’’ পর ক্ষণেই তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘চাকরি গেলে সবার যাবে। আর গ্রেফতার কেন?’’
জহিরুদ্দিন মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম কুসুম কামিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সোমবার বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলারই আরও তিন প্রাথমিক শিক্ষকের সঙ্গে তাঁরও ঠাঁই হয় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে।
সোমবার সকালে ‘কলকাতা যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন জহিরুদ্দিন। সমন এসেছিল আদালতে হাজিরার। সেই থেকে উৎকণ্ঠায় ছিল পরিবার। দুপুরে সংবাদমাধ্যমে দেখে এক প্রতিবেশী জহিরুদ্দিনের গ্রেফতারির খবর দেন বাড়িতে। সেই থেকে বাড়িবন্দি হয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার। প্রথমে কিছুতেই কথা বলতে রাজি হননি জহিরুদ্দিনের মা। পরে নিস্তব্ধতা ভেঙে বৃদ্ধা বলেন, ‘‘পাড়ার এক জন এসে বলল জহিরকে কোর্ট থেকে জেলে দিয়ে দিয়েছে! কাকে টাকা দিয়েছে, কী ভাবে চাকরি হয়েছে, আমি কিচ্ছু বলতে পারব না। ও যখন চাকরি পেয়েছে, তার কিছু দিন আগে ওর বাবা মারা যায়। তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। তবে দুর্নীতি যদি হয়ে থাকে, আমার ছেলে তো একা করেনি! আর বাকিদের শাস্তি কই?’’ জোবেদার আরও প্রশ্ন, ‘‘দুর্নীতি হলে চাকরি যেতে পারে, কিন্তু জেলে দেবে কেন?’’
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় এই প্রথম গ্রেফতার হলেন টাকা দিয়ে চাকরি করার অভিযোগে অভিযুক্তেরা। জেলে যাওয়া চার শিক্ষকই মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তাঁদের জামিনের আবেদন নাকচ করে বিচারক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাকা চেয়ে কেউ আপনাদের বাড়িতে যাননি। আপনারা টাকা নিয়ে তাঁদের কাছে গিয়েছেন।’’ টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া এবং টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া, দুটোই অপরাধ বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের। কিন্তু জহিরুদ্দিনের মায়ের দাবি, সেই দোষে কেন একা শাস্তি ভোগ করবেন তাঁর ছেলে। টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ তো অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তাঁদের শাস্তি কই? প্রশ্ন তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy