আদালতের পথে ধৃত। নিজস্ব চিত্র
দু’ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিল মিল্টন। অনটন-অনাদরেই কেটেছিল তার ছেলেবেলা। আর এর ফলে লেখাপড়ায় ইস্কুলের গন্ডি পার করে ওঠা হয়নি তার। সীমান্তে বসবাস, কম বয়সেই হাত পাকায় পাচারের কারবারে। পুলিশর খাতায় নাম উঠতে দেরি হয়নি। রাজনীতির ছায়া খুঁজতে তাই কংগ্রেসের শরণাপন্ন হয় সে।
মিল্টনের দাদু খোদাবক্স মণ্ডল ও বাবা নূরবক্স অভিযুক্ত ছিলেন এক সিপিএম কর্মী খুনের ঘটনায়। সেই মামলায় দীর্ঘদিন জেলেও ছিল তারা। কংগ্রেসের ডাকাবুকো পরিবার হওয়ার সুবাদে ২০১৩ সালে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় কংগ্রেস টিকিট দেয় মিল্টনের স্ত্রী তামান্না ইয়াসমিনকে। আর, তার পরে একেবারে সাহেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের আসনে স্ত্রী তামান্না ইয়াসমিন। স্ত্রী প্রধান হলেও বকলমে দলের এবং পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজ-কর্মের দায়িত্ব ছিল মিল্টনের কাঁধেই। কিন্তু বছর চারেক কংগ্রেসের হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত চালানোর পরে দল বদল করে মিল্টন-সহ একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রভাব বাড়তে থাকে মিল্টনের। আর এই দলবদল করার ফলে এক সময় যার সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল সেই তহিরুদ্দিনকেও পাশে পেয়ে যায় মিল্টন। ক্রমেই আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এলাকার এই তৃণমূল নেতা। বিরোধীদের দাবি, দলবদলের পরে এক দিকে যেমন তহিরকে পাশে পায়, অন্য দিকে পাশে পায় প্রশাসন এবং পুলিশকে! সব মিলিয়ে বাড়তে থাকে প্রভাব। বাড়তে থাকে ব্যাঙ্ক ব্যালান্স। একটা সময় সাহেবনগর এলাকার শেষ কথা বলার মালিক হয়ে দাঁড়ায় মিল্টন। আর এর ফলেই তার দলের ভেতরে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব, একটা গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধচারণ করলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি মিল্টনের দাপটের সামনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাগরিক মঞ্চের হাত ধরে সেই গোষ্ঠী রুখে দেয় মিল্টনকে। আর রুখতে গিয়েই মৃত্যু হয় দু’জন নিরীহ মানুষের, জখম হয় আরও তিন জন।
বছর পঁয়ত্রিশের মিল্টন এলাকার সাহেবনগর স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার পরেই পাচারের কারবার আর রাজনীতিতে হাত পাকানো। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকার মাতাল এবং দুষ্কৃতী শ্রেণির মানুষদের সঙ্গে বছর কয়েক ধরে মিল্টনের ওঠাবসাটা এতটাই বেশি হয়েছিল যে এলাকার মানুষ তার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র আমল দিত না সে, ফলে এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ যখন নাগরিক মঞ্চের পাশে তখনও সে তহিরের সঙ্গে সঙ্গ দিয়ে আক্রমণ শানাতে গিয়েছিল সাহেবনগর বাজারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy