Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

পুরনো গাড়ি কিনে ফিরলাম গুজরাত থেকে

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার সুরাট আমার নিজের শহর হয়ে গিয়েছিল, কখন তা বুঝতেই পারিনি। বুঝলাম লকডাউনের সময়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সঞ্জীব রায়
নিমতিতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৩:৩৭
Share: Save:

আমি বড় হয়েছি স্বর্ণকার পরিবারে। আমার পুর্বপুরুষ সোনার অলঙ্কার তৈরি করতেন। বাবাও সোনার অলঙ্কার তৈরি করেন। আমাদের নিজস্ব দোকান আছে। দোকানে বাবা ছাড়াও আরও দুজন কাজ করতেন। আমি তখন পড়াশোনা আর খেলাধুলো নিয়ে থাকতাম। অনেক সময় দেখতাম দোকানে সোনার গয়নার জন্য লোকজন যাওয়া আসা করাছে। বাবা কিছুদিন থেকে মাকে বলত, সোনার গয়না মানুষ কি করে তৈরি করবে যা দাম বাড়ছে। সোনার দাম বাড়তে থাকায় বাবার ব্যবসা কমতে থাকে। একদিন কাজের যে দু’জন ছিল তারা কাজ ছেড়ে চলে গেল। বাবা আমাকে বলল পড়ার পড় অবসর সময়ে খেলাধুলা না করে দোকানে বসতে হবে। বাবার কথা অনুযায়ী আমি দোকানে বসতে লাগলাম। প্রথমে বাবা রুপোর আংটি, কানের দুল এসব শেখাতে লাগল। আমিও একদিন স্বর্ণশিল্পী হয়ে গেলাম।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাতের সুরাটে আমরা পৌঁছলাম। প্রথম কয়েক মাস কাজ করতে ভাল লাগত না। বাড়ির জন্য মন খারাপ করত। তারপর সব ঠিক হয়ে যায়। আমি দেখলাম বাংলার বহু মানুষ সেখানে কাজ করেন। আমি যে শেঠের কাজ করতাম তিনি অত্যন্ত ভদ্রলোক। কোনও কাজ ভুল হলে বুঝিয়ে দিতেন।

সুরাট আমার নিজের শহর হয়ে গিয়েছিল, কখন তা বুঝতেই পারিনি। বুঝলাম লকডাউনের সময়। প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণার পরেই যেন শহরটা বদলে গেল। পরিচিত মানুষরা কেমন যেন অপরিচিত হয়ে গেল। শেঠজি তার বাসায় ডেকে বলল। তোমরা বাড়ি চলে যাও।

ট্রেন, বাস সব বন্ধ। আমাদের খাবার একটা মেস ছিল সেটাও বন্ধ। ঘরে রান্নার বাসন পত্র কিছু নেই। দোকান বন্ধ। মুদির দোকান ছাড়া। আর পেলাম অনলাইনে পিৎজা, ধোসা, ইডলি। তাই খেয়ে ১৫ দিন কাটল। শরীর অসুস্থ হয়ে গেল। বাড়ি আসার কোন পথ নেই। লকডাউনের ২২ দিন পর একটা পুরানো গাড়ি কিনলাম দেড় লক্ষ টাকায় চার জনে। সেই গাড়িতে আমরা রওনা দিলাম বাড়ির উদেশ্য। সুরাট থানা থেকে একটা অনুমতি পত্র নিয়েছিলাম। তাই খুব বেশি অসুবিধায় পড়িনি। রাজ্যের বর্ডারগুলোয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

খাবার বলতে বিস্কুট, কলা। অনেক যায়গায় রাস্তায় দেখলাম খাবার ব্যাবস্থা করেছে। একদিনে রাতে রুটি আর ডাল খেয়েছিলাম বাকি পথ কলা আর বিস্কুটে হয়ে গিয়েছে। চারদিনে বাড়ি পৌঁছই। বাড়ি ঢোকার আগে ধুলিয়ান হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই। তারপর বাড়িতে এসে ১৫ দিন কোয়রান্টিন। এখন পাড়ায় সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরে বেড়ায়। পরিস্থিতি স্বভাবিক হলে ফিরে যাব গুজরাত।

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers NImtita
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy