Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

‘বাইরে রোজগার বেশি, তাই কষ্ট সহ্য করে থাকি’

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

রফিকুল শেখ
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০৫:৫২
Share: Save:

মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ ব্লকের একটি গ্রামের নাম মালঞ্চ। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত একটি গ্রামই ছিল। তারপর ফিডার ক্যানেল কাটার পর মালঞ্চ গ্রামকে দুটো ভাগ করে দেয়। বলা হয়েছিল, চাষের জল পাওয়া যাবে তার ফলে জমিতে ফসল একাধিক বার ফলানো যাবে। চাষিদের উন্নয়ন হবে। ফিডার ক্যানেলের পশ্চিম পাড়ে যারা বাস করে তাদের বিপদ বেড়ে গেল। প্রয়োজনে শহর যেতে হলে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে ধুলিয়ান চলে যাওয়া যেত। এখন তা আর সম্ভব নয় ফিডার ক্যানেল নৌকায় করে পার করে তারপর শহর যাওয়ার রাস্তা। তার জন্য অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। থেকে যায় আমার বাপ ঠাকুরদার মতো কিছু গরিব মানুষ। তাদের যাওয়ার কোনও উপায় ছিল না। আজও যোগাযোগের ব্যাবস্থা হয়নি। নৌকায় ফিডার ক্যানেল পেরিয়ে যেতে হয় কলেজে, হাসপাতালে বা কোনও প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে শহরে। তাই রাজমিস্ত্রির কাজ শিখলাম।

হরিয়ানায় রাজমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি আমাদের এখান থেকে দ্বিগুণ। হরিয়ানার রোহতক জেলায় চলে গেলাম। সেখানে আমাদের পাড়ার আরও ১২ জন রাজমিস্ত্রি আছেন। সকাল আটটা থেকে বিকাল তিনটে পর্যন্ত কাজ। তারপর কাজ করলে ঘন্টা হিসাবে মজুরি। দেখলাম সবাই নিদিষ্ট কাজের পর চার, পাঁচ ঘন্টা বেশি কাজ করছে। এতে দৈনিক আয় বারশো থেকে দেড় হাজার টাকা হয়ে যেত।

কিন্তু সরকার লকডাউন ঘোষণা করতেই কাজ বন্ধ। রোহতক বাজার বন্ধ। সকালবেলা দু’ঘণ্টা খোলে। শুধু আনাজের জন্য। কোনও গাড়ি চলে না। কয়েকটা টোটো মাঝে মধ্যে দেখা যায়। তার ভাড়া আবার কী হবে তা ঠিক করবে টোটো চালক। দশ টাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকা।

আনাজের দামও অনেক। তার উপর পুলিশ আছে। বাইরে কেন প্রশ্ন করার আগেই মার। তাই বাইরে বের হওয়া বন্ধ। একদিকে খাবারের অভাব অন্যদিকে কাজ নেই। টাকার অভাব। কী করব কোন দিকে যাব। বাড়ি আসার কোনও পথ নেই। এর মধ্যে আবার দ্বিতীয় লকডাউনের ঘোষনা। এ বার কী হবে আমাদের। বারো জন মনুষ না খেয়ে মরব!

জানতে পারলাম বাঙালিদের জন্য দুবেলা খাবার ব্যাবস্থা করেছে রোহতক ফুটবল মাঠে। সেখানে গিয়ে খেয়ে আসতাম। বাড়ি আসব তার পয়সা নেই। বাড়ি থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাঠালে লকডাউন শিথিল হতেই বাস ভাড়া করে আমরা বাড়ি ফিরে আসি।

লকডাউনে সবাই কষ্ট পেয়েছে। ভিন রাজ্যে আমরা ছিলাম তাই একটু বেশি কষ্ট পেয়েছি। কিন্ত কাজ তো করতেই হবে। সে যেখানেই হোক। দেশ স্বাভাবিক হোক তারপর ভাবব কোথায় কাজ করব।

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy