প্রায় মাস খানেক ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে আম বাঙালির হেঁশেলে।
চালের কারবারিদের মতে, এক মাসের ব্যবধানের মিনিকিট চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি দশ থেকে বারো টাকা। অর্থাৎ কুইন্টাল প্রতি চালের দাম বেড়েছে প্রায় এক হাজার টাকার বেশি। সাধারণ মানের চালের দামও বেড়েছে কুইন্টাল প্রতি প্রায় দুশো টাকা।
চালের কারবারি দাবি গত বছর জুন-জুলাই মাসে চালের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছিল। তারপর চালের দাম কিছুটা কমলেও মাস খানেক ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী বলে দাবি চালের কারবারিদের।
চালের কারবারিদের দাবি, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেও মিনি কিট চালের দাম প্রস্তুতকারী সংস্থা ও মান অনুযায়ী ২৬ কেজি প্যাকেটের দাম ছিল ১১৮০ টাকা থেকে ১২২০ টাকার আশেপাশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় তিন দফায় ২৬ কেজি প্যাকেটের চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫০ থেকে ১৪৭০ টাকায়। স্বর্ণ চালের দাম ৮৫০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১০ থেকে ৯২০ প্যাকেটে (২৬ কেজির প্যাকেট)। রত্না চালের দাম ১০২০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১০ টাকায়। জিয়াউল হক নামে এক চাল বিক্রেতা বলেন, “প্রায় এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে।” বিল্লাল হোসেন নামে হরিহরপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, “স্বল্প রোজগার। চালের দাম এক মাসে যদি এত বেড়ে যায় আমরা খাব কী?”
এ ভাবে চালের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজছেন চালের কারবারিরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় অধিকাংশ চাল আসে দুই বর্ধমান, বীরভূম ও জেলার নবগ্রামের একাধিক চালকল থেকে। চালের কারবারিদের একাংশের মতে, চালের দাম বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে চালের উপর অতিরিক্ত জিএসটি লাগু হয়েছে। তার ফলে সেই সময় থেকে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তা ছাড়া, আমন ধানের মরসুমে চাষ ও ফলন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি চাষিদের একাংশের। কারবারিদের একাংশের মতে, সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কিনছে। ফলে বিভিন্ন চাল কলে ব্যবসায়ীদের চালের জোগান তুলনামূলক ভাবে কমেছে। বোরোধান রোয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বোরোধান মিনি কিট চাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে বোরো ধান ওঠার আগে পর্যন্ত চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে দাবি কারবারিদের একাংশের।
সহায়ক মূল্যে ২৩০০ টাকা কুইন্টাল দরে ধান কিনছে সরকার। খোলা বাজারে ২০৮০ টাকা থেকে ২১০০ টাকা কুইন্টাল দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাষিরা ঝুঁকছেন সরকারকে ধান বিক্রির জন্য।
কৃষি বিপণন দফতরের সহকারী অধিকর্তা (প্রশাসন) তমাল দাস বলেন, “চালের দাম বৃদ্ধির কারণে একাধিক কারণ থাকতে পারে। আশা করছি দাম শীঘ্র কমবে। বাজারের উপর নজর রাখছি।’’ জেলা খাদ্য নিয়ামক সুদীপ্ত সামন্ত বলেন, “আমরা সহায়ক মূল্যে ধান কিনছি। খোলা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)