প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই মোবাইল ফোনে ব্যক্তিগত বার্তায় পৌঁছে যেত প্রশ্নপত্রের সব উত্তর। বছর দুয়েক আগে পর্যন্তও চলেছে কারচুপির এই পন্থা। প্রশাসন ছলছাতুরি ধরে ফেলায় ধাপে ধাপে বদলে গিয়েছে পরীক্ষায় টুকলির সেই ধরন। কখনও জামার বোতামের চেয়েও ছোট যন্ত্র কানে লাগিয়ে এসেছে পরীক্ষার্থীরা। আবার কখনও ভ্যানিশিং ইঙ্ক (উবে যাওয়া কালি) ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে তাদের। তবে এ বার রাজ্য পুলিশের পরীক্ষায় নতুন কারচুপির ধরন দেখা গেল। অ্যাডমিট কার্ড জাল করে মেধাবী পড়ুয়াদের পরীক্ষা দিতে পাঠিয়ে চলল সেই কারচুপি। যদিও পরীক্ষার আগের রাতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে গিয়েছে অনেক পরীক্ষার্থী। এই ঘটনার তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা জানতে পারলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তো বটেই, বিশেষত নদিয়ায় দীর্ঘ দিন ধরেই নাকি সক্রিয় পরীক্ষায় কারচুপির এমন একটি চক্র। আর সেই চক্রের সুতো পৌঁছে গিয়েছে মালদহেও।
রবিবার রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে। তার আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতে বিধাননগর, সোদপুর এবং কলকাতা সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক ভুয়ো পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ধৃতদের মধ্যে ছ’জন নদিয়ার বাসিন্দা। রানাঘাট পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশ সংলগ্ন নদিয়ার বগুলা, হাঁসখালি, মাজদিয়া এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই এ ধরনের কারবার চলে আসছে। বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থাকার সুবাদে তদন্তকারীরা একে ‘চোর-পুলিশ খেলা’ বলেই অভিহিত করছেন। আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কারচুপির চলতি পন্থায় কেউ পাকড়াও হলেই নতুন কিছু নিয়ে হাজির হয় জালিয়াতেরা।
এক আধিকারিক জানান, এক সময় হলে থাকা পরীক্ষার্থীদের মোবাইলে ব্যক্তিগত বার্তায় সব উত্তরই পাঠিয়ে দেওয়া হত। এই চক্র ধরা প়ড়ে যাওয়ায় আমদানি হয়েছিল ছোট্ট একটি যন্ত্র। যা জামার বোতামের চেয়েও ছোট। পরীক্ষার্থী হলে ঢুকে ওই যন্ত্রটি অন করলেই বাইরে বসে থাকা কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। এই ভাবেও অনেক দিন চলেছে উত্তর আদানপ্রদান। পরবর্তী কালে পরীক্ষার হলে জ্যামার লাগিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু হয়। যার ফলে অনেকটাই আটকানো গিয়েছে কারচুপির এই পন্থা। এর পর রাজ্য পুলিশের পরীক্ষায় কারচুপির ধরন দেখে চক্ষু ছানাবড়া তদন্তকারীদের।
কোন পদ্ধতিতে কারচুপির নতুন পরিকল্পনা করেছিলেন পরীক্ষার্থীরা? তদন্তকারীরা জানান, আগে অ্যাডমিট কার্ডের ছবি এবং সই বদলে ফেলা হয়। এর পর টাকা খরচ করে ভাড়া করা মেধাবী পড়ুয়াদের পরীক্ষা দিতে পাঠানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মালদহ জেলায়ও এমন একটি চক্রের খোঁজ মিলেছে। কিছু দিন আগেই উজ্জ্বল নামে ভুয়ো পরীক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছে এই কারচুপি করতে গিয়ে। তাকে জেরা করেই এই তথ্য মিলেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা পুলিশের এক প্রাক্তন আধিকারিক অগ্নিবেশ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এখন নতুন নতুন দুর্নীতির ধরন শুনে আমরা অবাক হয়ে যাই। বুঝতে সময় লাগে ঠিক কী ঘটছে।’’ পরীক্ষায় কারচুপির নতুন নতুন পন্থার আবিষ্কার প্রসঙ্গে সফটঅয়্যার বিশেষজ্ঞ শিবা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাধারণত দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত মাথারা অত্যন্তই মেধাবী হয়ে থাকেন। যাঁদের কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা কারচুপি চালান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy