Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
TB

করোনা নাকি যক্ষ্মা, উপসর্গ নিয়ে বিভ্রান্তি

প্রাথমিক উপসর্গে মিল থাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে যক্ষ্মা রোগীদের আলাদা করতে গিয়ে এ ভাবেই সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীরা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৩:২৫
Share: Save:

কাশি-জ্বর থাকায় এক পরিযায়ী শ্রমিককে রাখা হয়েছিল কৃষ্ণনগরের কর্মতীর্থের কোয়রান্টিন সেন্টারে। সেখানে তাঁর কাশির সঙ্গে রক্ত আসায় সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত।

প্রাথমিক উপসর্গে মিল থাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে যক্ষ্মা রোগীদের আলাদা করতে গিয়ে এ ভাবেই সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীরা। এক চিকিৎসক বলেন, “আসলে করোনাভাইরাস আর যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তের প্রাথমিক লক্ষণ প্রায় একই রকম। তাতেই মাঝেমধ্যে কিছুটা হলেও সমস্যা হচ্ছে।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন মুম্বই থেকে। কৃষ্ণনগরের কর্মতীর্থের কোয়রান্টিন সেন্টারে তাঁর কাশির সঙ্গে রক্ত আসার খবর পেয়ে ছুটে যান জেলার যক্ষ্মা আধিকারিক। লালারস পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়ে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়, ওই পরিযায়ী শ্রমিককে কোয়রান্টিন সেন্টারে আনা হয়েছিল করোনার সন্দেহভাজন হিসাবে। কিন্তু দেখা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত নন, তিনি আসলে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। তবে এমনটা শুধু তাঁর সঙ্গে নয়, ঘটেছে একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে।

চিকিৎসরা জানান, এত দিন সাধারণত দু’সপ্তাহ জ্বর, সর্দি কাশি থাকলে যক্ষ্মা সন্দেহে সেই ব্যক্তির নমুনা ল্যাবে পরীক্ষা করা হত। সেখানে পজিটিভ রিপোর্ট না এলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিবি ন্যাট পরীক্ষা করা হত। রিপোর্ট পজিটিভ হলে সেই ব্যক্তির যক্ষ্মা রোগে ওযুধ কাজ করছে কিনা, তা বোঝার জন্য কলকাতা থেকে এলপিএ টেস্ট বা কালচার করিয়ে এনে সেই মতো চিকিৎসা করা হত। এর মধ্যে তেমন জটিলতা ছিল না। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে জটিলতা। দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।

জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা জানান, চিকিৎসার পর করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার পরও যদি দেখা যায় যে সেই ব্যক্তির জ্বর, সর্দি কাশি রয়ে গিয়েছে, তাহলে তাঁর যক্ষ্মার পরীক্ষা করে সেই মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রিপোর্ট যদি পজিটিভ হয় তাহলে সেই মতো যক্ষ্মার চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “করোনায় আক্রান্ত হলে ১৪ দিনের মধ্যে সেই ব্যক্তি অনেকটাই কাবু হয়ে যাবেন। যেটা যক্ষ্মার ক্ষেত্রে হবে না। তা ছাড়া ১৪ দিনের মধ্যে লালারসের রিপোর্ট চলে আসছে। সেখানে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত কি না।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে নদিয়া জেলায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। লকডাউনের পর থেকে প্রায় ৪০০ জনের যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথম আবস্থায় করোনা সন্দেহভাজন হিসাবে চিহ্নিত ছিলেন। জেলার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি মাসে জেলায় গড়ে তিনশো জন করে যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিত হন। কিন্তু এই লকডাউনের সময় মাসে গড়ে ৫০ জন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, “আসলে হাসপাতালগুলোতে আউটডোর বন্ধ থাকায় যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিত হচ্ছে কম। এখন তাই স্বাস্থ্য কর্মীরাই ভরসা।” জেলা যক্ষ্মা আধিকারিক শুভাশিস চন্দ বলেন, “কোভিড ও যক্ষ্মার প্রাথমিক লক্ষণ প্রায় এক। ফলে কোনও ভাবে যাতে বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, তার জন্য প্রতিটা ক্ষেত্রে খুব কাছ থেকে নজর রাখছি। যাতে যক্ষ্মা রোগীরা কোনও ভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন।”

অন্য বিষয়গুলি:

TB Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy