জামাই সাজে ধামেশ্বর মহাপ্রভু।— নিজস্ব চিত্র
প্রতিদিন তিনি ধামেশ্বর মহাপ্রভু ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, কেবল একটি দিন তাই তিনি ভক্তের আরাধ্য নন, বিষ্ণুপ্রিয়া প্রাণনাথ নদিয়াবিহারীর সেই দিন জামাই আদর।
সকালে ষাটের বাতাস থেকে দুপুরে ষোড়োশপচারে ভোগ, সেই সুগন্ধী পান পর্যন্ত একেবারে নির্ভেজাল জামাই আদর। এ ভাবেই জামাইষষ্ঠীর দিন নবদ্বীপের মহাপ্রভু বাড়িতে মহাপ্রভুকে সেবা করা হয় বিষ্ণুপ্রিয়া সেবিত বিগ্রহকে। ঠিক কবে থেকে এই প্রথার সূচনা, তা এখন আর জানা যায় না। তবে অনুমান করা যায়, বাণিজ্যনগরী হিসেবেও খ্যাত নবদ্বীপে বাবু সংস্কৃতির রমরমার আমলেই এই প্রথার সূচনা। যেখানে নগরীর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে জামাই বলেও পুজো করা শুরু হয়।
জীবন্ত এক জনপদ মিলিয়ে দিয়েছে দুই ভিন্ন ধারার ঐতিহ্যকে। এক দিকে রয়েছে, ষোড়োশ শতকের বাঙালির নবজাগরণ। অন্য দিকে, ইংরেজ আমলে শুরু হওয়া বাবু সংস্কৃতি। নবদ্বীপ এই দুই ধারাই বহন করে চলেছে। তাই সেই নবজাগরণের প্রাণপুরুষ চৈতন্যদেবকে জামাই বলে পুজো করা হয় খাস নবদ্বীপে।
তবে সেবাইত গোস্বামী পরিবারের সদস্যেরা জানান, তাঁরা বংশানুক্রমে এই উৎসব এই ভাবেই উদ্যাপন হতে দেখে এসেছেন, একই ভাবে তাঁরাও উদ্যাপন করছেন। কেন এমন উৎসব, এ প্রসঙ্গে মহাপ্রভুর সেবাইত গোস্বামী পরিবারের পুলক গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর ভাইয়ের বংশ। যাদবাচার্যের বংশধর। সেই হিসেবে সনাতন গোস্বামীর কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর জামাই বিশ্বম্ভর আমাদের পরিবারের জামাই। এই সম্পর্কে মাথায় রেখেই বহু বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে।’’ বছরের অন্য দিন মহাপ্রভুর যে ভাবে নিত্যসেবা হয়, এ দিন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ভাবে আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ মহাপ্রভুকে বাতাস করেন দুই প্রজন্মের কল্যাণী গোস্বামী ও তনুশ্রী গোস্বামী। তালপাতার পাখায় বাঁধা থাকে আম, দূর্বা, বাঁশের শিষ। গঙ্গার জলে সেই হাতপাখা ভিজিয়ে সেই শীতল বাতাল করা হয় মহাপ্রভুকে। মনে মনে মঙ্গলকামনা করেন ‘জামাই’য়ের। কপালে এঁকে দেওয়া হয় হলুদের ফোঁটা। বেজে উঠল ঢাক। প্রসঙ্গত, বছরের এই একটি দিনেই মহাপ্রভুর বাড়িতে ঢাক বাজে। এরপর কয়েক ঘণ্টা ধরে চলল গোস্বামী পরিবার ও এলাকার আপামর জনগণের মহাপ্রভুকে জামাই বলে আদর, আপায়্যন। মহাপ্রভুকে সেই ভাবে বরণে পুরুষেরাও অংশ নেন।
প্রবীণ কল্যাণীদেবী জানান, ‘‘আমি আমার শাশুড়িকেও দেখেছি মহাপ্রভুকে এই ভাবে বরণ করতে। আমিও তখন তাঁর সঙ্গে থাকতাম। এখন সঙ্গে রয়েছে আমার পুত্রবধূ।’’
বরণের পরে এ দিন বদলে যায় ভোগের পদও। সকালে জামাইবরণ পর্বে দেওয়া হয় মিষ্টি, দই এবং মরসুমি ফল। মধ্যাহ্নের পদে শাক, শুক্তো, পাঁচ রকম ভাজা, মোচাঘণ্ট, ডাল, কপির তরকারি, পটোলের তরকারি, পুষ্পান্ন ও আধুনিক পদ পনির পসন্দ, ছানার ডালনা, চাটনি, পায়েস। সন্ধ্যাবেলা নানা রকমের মিষ্টি। রাতে লুচি ও রাবড়ি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy