তাঁত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জে সিটুর নেতৃত্বে চলা আন্দোলনের পারদ চড়ছে। সেই হাওয়া পালে লাগাতে এ বার নেমে পড়ল তৃণমূল আর বিজেপি-ও।
যন্ত্রচালিত তাঁতে টানা কয়েক দিনের ধর্মঘট এবং ত্রিপাক্ষিক বৈঠক একাধিক বার ভেস্তে যাওয়ার জেরে উত্তেজনা ছিলই। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নবদ্বীপের গঙ্গার পূর্বপাড়ে স্বরূপগঞ্জ খেয়াঘাট এবং সংলগ্ন এলাকা। সিটু সমর্থিত নদিয়া জেলা তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের নবদ্বীপ জোনাল কমিটির ডাকে সকাল ৮টা থেকে খেয়াঘাট এবং নবদ্বীপ ঘাট থেকে কৃষ্ণনগর যাওয়ার রাস্তায় এক ঘণ্টার ‘প্রতীকী অবরোধ’ করা হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ময়দানে নেমে পড়ে তৃণমূল। স্বরূপগঞ্জ ঘাট চত্বরে পৌঁছে দলের যান প্রচুর কর্মী। উপস্থিত হন নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের হরিদাস দেবনাথ, পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহারাও। ঘাট অবিলম্বে খোলার দাবি তোলা হয়। সিটুর তরফে জানানো হয়, প্রতীকী অবরোধ চলছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সব খুলে দেওয়া হবে। শুরু হয় স্লোগান, পাল্টা স্লোগান। তারই মধ্যে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বাম ও তৃণমূল সমর্থকেরা। শুরু হয় ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি। ইটও ছোড়া হয়। বেগতিক বুঝে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। তৃণমূল শ্রমিক আন্দোলনের উপরে হামলা করল কেন, এই প্রশ্ন তুলে সন্ধ্যায় মহেশগঞ্জ থেকে স্বরূপগঞ্জ পর্যন্ত মিছিল করে বিজেপি।
এ দিনের বিক্ষোভে হাজির ছিলেন প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি, সিপিএমের মেঘলাল শেখ। দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা শ্রমিক নেতা সুমিত বিশ্বাস বলেন, “তাঁত শ্রমিকেরা সকাল এক ঘণ্টার প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছিলেন। হঠাৎ তৃণমূলের লোকজন এসে হামলা শুরু করে। কিন্তু শ্রমিকদের দৃঢ়তার সামনে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।”
তাঁত শ্রমিকদের ৩০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি-সহ নানা দাবি নিয়ে গত ১ জুলাই থেকে আন্দোলনে নেমেছেন গ্রামীণ নবদ্বীপের তাঁত শ্রমিকেরা। চলছে মিছিল, মিটিং, পথ অবরোধ। তাঁত মালিকদের অভিযোগ, সিপিএম প্রভাবিত সংগঠন সিটুর প্ররোচনায় এলাকার অধিকাংশ পাওয়ারলুম একে একে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কমবেশি দেড় হাজার শ্রমিক কর্মহীন। পুজোর মুখে থমকে উৎপাদন। কিন্তু প্রশাসনের চেষ্টা সত্ত্বেও কার্যত তাঁরাই বারবার আলোচনা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন।
এই অচলাবস্থা কাটাতে গত ১৫ জুলাই শ্রমিকদের তরফে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়। গত সোমবার কৃষ্ণনগরে এবং বুধবার কল্যাণীতে শ্রমিক, মালিক ও সিটু প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিল শ্রম দফতর। কিন্তু দু’দিনের এক দিনও হাজির হননি মালিকেরা। বরং মালিক সমিতির তরফে মণীন্দ্র দেবনাথ দাবি করেন, বৈঠকে যেতে তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন এবং সংশ্লিষ্ট মহলে তা জানিয়েছেন।
এই অবস্থাতেই এ দিন প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল সিটু। সকাল ৮টায় খেয়া এবং বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন নিত্যযাত্রী, স্কুলপড়ুয়া থেকে সাধারণ যাত্রীরা। পরে স্বরূপগঞ্জ চারমাথার মোড়ে পথসভা করে তৃণমূল বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “ধর্মঘটের নামে কেউ যদি জুলুম করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, শান্তিভঙ্গ করে তা হলে নবদ্বীপের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল তাতে বাধা দেবে।”
অচলাবস্থা চলার পিছনে মালিক পক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বদলে বিধায়ক কার্যত তাদের সমর্থনই করেছেন। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “মালিক পক্ষ এবং তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন যখন বারবার ডেকেছিল, তখন বামেরা আসেননি কেন?’’ তাঁর দাবি, ‘‘আজ যখন উভয় পক্ষে মজুরি বৃদ্ধির কথা হয়ে সব মিটে গিয়েছে, নিজেদের প্রাসঙ্গিক করতে বামেরা শ্রমিকদের উস্কে পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলেছে।” সিটুর নদিয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম সাদি বলেন, “কেন শ্রমিকদের প্রতীকী আন্দোলনে পুরপ্রধান থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে ছুটে আসতে হল, বুঝলাম না। সোমবার নবদ্বীপ ব্লক অফিসে ফের আলোচনার সময় ঠিক হয়েছে। আশা করি, তাঁদের পছন্দ মতো জায়গায় বৈঠক হওয়ায় মালিক পক্ষ উপস্থিত থাকবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy