ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র
দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তালা ঝুলেছিল। তারপর থেকে গত প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। বন্ধ পঠনপাঠন। গ্রামের পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা যাতে পড়াশোনায় পিছিয়ে না পড়ে সে কথা মাথায় রেখে এ গ্রাম ও গ্রাম ছুটে বেড়াচ্ছেন পীরতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত সরকার।
হরিহরপাড়ার ট্যাংরামারি গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্তবাবুর বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।
লকডাউনের মধ্যে সকাল-বিকেল বাইক নিয়ে স্কুল সংলগ্ন গ্রামগুলিতে ঘুরছেন তিনি। প্রতিটি পড়ুয়ার বাড়ি গিয়ে জানছেন পড়াশোনার হালহকিকত। কারও কোনও পাঠ্যাংশ বুঝতে অসুবিধে হলে তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ছুটির মধ্যে ‘স্যর’কে হাতের কাছে পেয়ে খুশি খুদে পড়ুয়ারা। শিক্ষকের বাইকের আওয়াজ শুনেই বই নিয়ে হাজির হচ্ছে পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সন্তানদের পড়াশোনার দিকে নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন ওই শিক্ষক। সপ্তাহে তিন-চার দিন এ ভাবেই পীরতলা গ্রামের এ পাড়া থেকে ও পাড়া ঘুরছেন প্রশান্ত।
হরিহরপাড়া চক্রের পীরতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২২০। অধিকাংশই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ফলে অনেকের বাড়িতেই সন্তানদের পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই। দীর্ঘদিন ছুটির ফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ছেদ পড়তে পারত। কিন্তু প্রশান্ত সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছেন, এমনই মত অধিকাংশ অভিভাবকের। ওই গ্রামের বাসিন্দা জারজিস হোসেন বলেন, ‘‘আমার ছেলে ক্লাস থ্রিয়ে পড়ে। খুব দুরন্ত। এখন স্কুল ছুটি। তাই বই খুলেও বসছিল না। তবে স্যর আসা শুরু করার পর থেকে এখন নিয়মিত বই নিয়ে বসছে।’’ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সোভানা খাতুনের মা ঝুমা বিবি বলেন, ‘‘প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ স্কুল। গ্রামে গৃহশিক্ষক তেমন কেউ নেই। স্যর এসে মাঝেমধ্যে পড়া বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন মেয়েকে। তাতে ওর খুব সুবিধে হয়েছে।’’ হাবিবুর শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘‘আমি বেশিদূর পড়াশোনা করিনি। ছেলেমেয়েকে পড়ানোর মতো বিদ্যে আমার নেই। স্যর আসায় সেই সমস্যা দূর হয়েছে।’’ তবে নিজের উদ্যোগ নিয়ে প্রশান্ত বলেন, ‘‘এই সব এলাকায় শিক্ষার হার কম।লকডাউনের জেরে স্কুলছুট হওয়ার সংখ্যা বাড়তে পারে। সেই চিন্তা করেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ কর প্রশান্তর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। হরিহরপাড়া চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুশান্ত মণ্ডল বলেন, "ওই শিক্ষক যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy