সকলের হাতে জলের বোতল। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক
পানীয় জলের কল বলতে সাকুল্যে একটি। সেই কলের জলে আবার আর্সেনিক রয়েছে। ফলে খুদে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা— সকলেই পানীয় জল বাড়ি থেকে বয়ে নিয়ে আসতে হয়। এমনকি বাইরে থেকে জল সংগ্রহ করে নিয়ে আসার পরে শুরু হয় স্কুলের মিডডে মিলের রান্না। এমনই চিত্র বেলডাঙা-১ ব্লকের ১৮ নম্বর মাঝপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
বিশেষজ্ঞরা যেখানে শিশুদের পিঠের ব্যাগের ওজন কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন, সেখানে ওই স্কুলের খুদেদের এক গাদা বই-খাতার সঙ্গে প্রতি দিন বয়ে আনতে হচ্ছে পানীয় জলের ঢাউস বোতল। কোনও কারণে সেই বোতলের জল ফুরিয়ে গেলে কী হবে? সেই উত্তর নেই খুদে পড়ুয়াদের কাছে। কারণ স্কুলে পরিস্রুত পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। যে কল রয়েছে, সেখানে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। ফলে মিড-ডে মিলের রান্না করতে কিংবা পানীয় জলের জল বয়ে আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েতকে লিখিত ভাবে জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুনাভ রায় চৌধুরী বলছেন, ‘‘২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি পরীক্ষাগারে কলের জল পরীক্ষা করিয়েছি। সেখানে আর্সেনিকের পরিমান লিটার প্রতি ০.১৬২৯ মিলিগ্রাম। ফলে সেই জল স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষক-শিক্ষিকা কেউ খেতে পারেন না। ছাত্রদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পানীয় জল বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে স্কুলে জলের জার কিনে রাখতে হয়েছে। প্রয়োজনে সেই জল পান করা হয়। বিষয়টি লিখিত ভাবে প্রশাসনকে জানান হয়েছে।’’
স্কুলের ২০ মিটার দূর দিয়ে চলে গিয়েছে পিএইচই’র জলের পাইপলাইন। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই জলের সংযোগ নেয়নি। অথচ স্কুলে যে কল রয়েছে, সেই জল শৌচকর্ম ছাড়া ব্যবহার করা হয় না। সরকারি হিসাবে প্রতি লিটারে ০.০১ মিলি গ্রাম আর্সেনিক থাকলে সেই জল ব্যবহার করা যায়। কিন্তু স্কুলের কলের জলে প্রতি লিটারে আর্সেনিকের পরিমান ০.১৬২৯ মিলি গ্রাম। ফলে ওই জল পানের অনুপযুক্ত বলে ব্যবহার করেন না কেউ। বাধ্য হয়ে প্রতিটি পড়ুয়াকে বাড়ি থেকে বোতলে করে পরিস্রুত পানীয় জল ব্যাগে ভরে স্কুলে বয়ে আনতে হচ্ছে। তাতে তাদের বইয়ের ব্যাগের ওজন পাঁচশো গ্রাম বেড়ে যাচ্ছে। পড়ুয়ারা সবচেয়ে বেশি সমস্যা পড়ে গরম কালে। বোতলের জল ফুরিয়ে গেলে ছুটতে হয় স্কুলের আশপাশের বাড়িতে। একই ভাবে জল সমস্যায় ভুগছেন মিডডে মিলের রান্নার কাজে জড়িত তিন জন সহায়িকা। তাঁদের প্রতি দিন বাইরে থেকে জল বয়ে আনতে হচ্ছে। তার পরে শুরু হয় স্কুলের ১৩৮ জন পড়ুয়ার রান্না।
তৃতীয় শ্রেনির মেনকা খাতুন, মৌসুমী খাতুন, সারাইয়া খাতুনদের কথায়, স্কুলের কলের জল পান করা যায় না। বাড়ি থেকে বোতলে করে জল বয়ে নিয়ে আসার কথা বলেছেন মাস্টার ও দিদিমনিরা। বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে জল বয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এছাড়া কোনও উপায় নেই।’’ পানীয় জলের সঙ্কট প্রসঙ্গে অভিভাবক আসার শেখ, আনারুল শেখ বলছেন, ‘‘বাড়ি থেকে পানীয় জল বোতলে ভরে দিতে হচ্ছে। স্কুলের কলে যদি আর্সেনিক থাকে, তাহলে কী করব! তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সমস্যার সমাধান করা।’’ স্কুলের শিক্ষিকা মহুয়া বিশ্বাস ও মলিনা খাতুন জানান, গরমে পড়ুয়াদের জল না পেলে কষ্ট তো হবেই।
বেলডাঙা-১ বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র বলেন, ‘‘আমি সদ্য এখানে এসেছি। তবে স্কুলের পাশ দিয়ে যদি পিএইচই’র জলের পাইপলাইন যায়, তাহলে অনুরোধ করব ওই জলের সংযোগ দিতে। যাতে স্কুলে পানীয় জল সরবরাহ করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy