বাংলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত আপাতত ধোঁয়াশায় ঢাকা। অতীত গরিমায় মহিমান্বিত বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজের বর্তমান অবস্থান আপাতত স্পষ্ট নয়। প্রায় ১৬৫ বছরের প্রাচীন ওই প্রতিষ্ঠানের বর্তমানের অবস্থান আদতে কলেজ নাকি বিশ্ববিদ্যালয়? তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছেও। সরকারি একটি আইন ও অন্য একটি নির্দেশের ফলে প্রাচীন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এখন হাঁসজারু দশা।
তখন কাশিমাবাজারের রাজা কৃষ্ণনাথ রায়ের বয়স ২১ বছর। ১৮৪৪ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি আত্মঘাতী হন। তার আগের দিন আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালেয়ের নামে কৃষ্ণনাথ তাঁর রাজপাটের প্রায় সবটাই দানপত্র উইল করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে আদালতের রায়ে সেই উইল বাতিল হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কিন্তু বেঁচে থাকে। তাঁর স্বপ্ন দেখার প্রায় পৌনে দু’শো বছর পরে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ‘দ্য মুর্শিদাবাদ ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ পাশ হয়। সেখানে বলা হয়েছে, কৃষ্ণনাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালেয়ে উন্নীত করা হল।
ওই আইনের ৬৪ নম্বর ধারার ৫ নম্বর উপধারা অনুসারে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর খাতায়-কলমে কৃষ্ণনাথ কলেজের অবলুপ্তি ঘটে। সেই মতো কয়েক মাস আগে কৃষ্ণনাথ কলেজের যাবতীয় সম্পত্তি রাজ্য সরকারের নামে হস্তান্তরিত করা হয়। কিন্তু গোল বাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ, স্থান ও কৃষ্ণনাথ কলেজের অস্তিত্ব নিয়ে। ওই কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কামাখ্যাপ্রসাদ গুহ কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রাক্তনী। তিনি বলেন, ‘‘১৬৫ বছরের মধ্যে ১০৩ বছর ওই কলেজের আর্থিক ও অন্য দায় বহন করেছে কাশিমবাজার রাজ পরিবার। ফলে ‘মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের সঙ্গে ‘কৃষ্ণনাথ’ শব্দটি যুক্ত করা হোক।’’
কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নামকরণের বিষয়ে প্রাক্তনীর দাবি মেনে ‘মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের সঙ্গে ‘কৃষ্ণনাথ’ শব্দটি যুক্ত করার প্রস্তাব পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে উচ্চশিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এখনও তার কোনও উত্তর আসেনি।’’ ‘দ্য মুর্শিদাবাদ ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ অনুসারে ১৬৫ বছরের প্রাচীন কৃষ্ণনাথ কলেজ সরকারি খাতা কলমে অবলুপ্ত। বাস্তবে তা প্রতিষ্ঠা পেলে শিক্ষা-সহ যাবতীয় বিষয়ে পিছিয়ে থাকা প্রায় ৮০ লক্ষ জনবসতির জেলা একটি স্নাতক স্তরের কলেজ থেকে বঞ্চিত হবে।
প্রাক্তনীদের সংগঠনের সম্পাদক দেবজ্যোতি বিশ্বাস বলেন, ‘‘রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রস্তাবিত ‘মুর্শিদাবাদ কৃষ্ণনাথ বিশ্ববিদ্যালয়’-এও স্নাতক স্তরের পাঠনপাঠন চালু থাকুক।’’ ‘মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যলয় আইন’ প্রণয়নের পরে আট মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়নি, ওই বিশ্ববিদ্যলয়ের অধীনে ছাত্রছাত্রীও ভর্তি হয়নি।
না কলেজ, না বিশ্ববিদ্যালয়— এই ত্রিশঙ্কু অবস্থার অবসান চেয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উচ্চশিক্ষা দফতরে আবেদন করা হয়। মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরবর্তী নির্দেশিকা না পাওয়া পর্যন্ত কলেজ পরিচালন সমিতিকেই কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। সেই মতো কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি চলছে।’’
কলেজের অধ্যক্ষ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার কাজ চলছে। চালু হয়ে গেলে কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy