বিমলেন্দু সিংহ রায়।
করিমপুর উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে নানা জল্পনা ছিল দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। কোনও অভিনেতাকে নাকি প্রার্থী করা হতে পারে বলেও রটেছিল। রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা ভূমিপুত্র বিমলেন্দু সিংহরায়কে প্রার্থী করে কার্যত চমকই দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর কথা বেশির ভাগের হিসেবেই ছিল না। ফলে প্রথম চোটে নেতাকর্মীদের একাংশ একটু ধাক্কাও খেয়েছেন।
দলের একটি সূত্রের খবর, তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনে বিমলেন্দুকে প্রার্থী করার পিছনে হাত আছে দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। তা কার্যত স্বীকার করে বৃহস্পতিবার বিমলেন্দু বলেন, “এত বছর ধরে দলটা করছি। এই প্রথম সে ভাবে স্বীকৃতি পেলাম। এর জন্য মহুয়া মৈত্রর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।” জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উনি শিক্ষিত মানুষ। দীর্ঘ দিনের নেতা। নেত্রী তাঁকে যোগ্য সম্মান দিয়েছেন।”
বিমলেন্দুর পৈতৃক ভিটে করিমপুর ২ ব্লকের মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙা গ্রামে। ১৯৭৬ সাল থেকে পাকাপাকি ভাবে কৃষ্ণনগরে থাকলেও বরাবরই তিনি নিজেকে ‘করিমপুরের ভূমিপূত্র’ বলে পরিচয় দেন। বালিয়ডাঙা হাইস্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করে তিনি ইংরেজি অনার্স নিয়ে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে পড়া। তার পর এমএ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮৫ সালে তিনি মুড়াগাছা হাইস্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। ২০০০ সালে ওই স্কুলেই প্রধান শিক্ষক হন। রাজ্য সরকারের শিক্ষারত্ন পুরষ্কার ও রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পেয়েছেন। দুই পুরস্কারের টাকাই দান করেছেন স্কুলের উন্নতির জন্য।
বিমলেন্দু সিংহ রায় (৬১)
পেশা: মুড়াগাছা হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। ২০১৩ সালে শিক্ষারত্ন। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার।
রাজনীতি: তৃণমূলের শিক্ষা সেলের জেলা কমিটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। দু’বার মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের চিফ ইলেকশন এজেন্ট। এক সময় করিমপুর বিধানসভায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন।
অন্যান্য: আসাননগর মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। ওয়েস্টবেঙ্গল কাউন্সিল অব হায়ার সেকেন্ডারি এডুকেশনের জেলার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সদস্য ছিলেন শিক্ষা দফতরের ডিস্ট্রিক্ট লেভেল ইনস্পেকশন টিমের।
বিমলেন্দুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনাও কলেজ জীবন থেকেই। ছাত্র পরিষদ ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে মমতার অনুগামী। তৃণমূলের সংগঠনে তেমন জায়গা না পেলেও জেলায় শিক্ষক নেতা বলেই তিনি পরিচিত। তৃণমূলের শিক্ষা সেলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে জেলার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সদস্য ছিলেন শিক্ষা দফতরের জেলাস্তরের পরিদর্শন দলেরও।
এ হেন এক জন হঠাৎ বিধানসভা নির্বাচনের টিকিট কী করে পেলেন, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন দলেরই অনেকে। বিশেষ করে যেখানে দীর্ঘদিন তিনি উজ্জ্বল বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। দু’বার তাঁর নির্বাচনী এজেন্টও হয়েছেন। কিন্তু দলের সংগঠনে সে ভাবে জায়গা করতে পারেননি। এবং উজ্জ্বলের সঙ্গে মহুয়ার টানাপড়েনের কথাও জেলায় সুবিদিত। তবে তৃণমূল সূত্রের দাবি, গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই পরিস্থিতি বদলায় এবং বিমলেন্দু ক্রমশ মহুয়া মৈত্রের ঘনিষ্ঠ মহলে জায়গা করে নিতে থাকেন। এ বার তারই স্বীকৃতি মিলেছে। কারামন্ত্রী উজ্জ্বল অবশ্য বলেন, ‘‘আমার লোক, ওর লোক বলে কিছু হয় না। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক।’’
বিমলেন্দুর দাবি, ‘দিদিকে বলো’র মোবাইল নম্বরে ফোন করে নিজের যোগ্যতার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। পরে প্রশান্ত কিশোরের অফিস থেকে ফোন করে তাঁর থেকে আরও তথ্য নেওয়া হয়। দলের একটা অংশ মনে করছে, করিমপুরে যে এ বার কঠিন লড়াই তা ভাল করেই জানেন নেতৃত্ব। সেই কারণে এমন এক জনকে প্রার্থী করা হয়েছে যিনি শুধু ভূমিপুত্রই নন, উচ্চশিক্ষিতও, যাঁর ‘বায়োডেটা’ প্রচারেও বিশেষ কাজে লাগবে।
দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব না হয় প্রার্থী করেছে, কিন্তু যাঁরা ভোটের ময়দানে লড়াই করবেন সেই নেতাকর্মীরা কি ভাবছেন? এ দিন আচমকা বিমলেন্দুর নাম শুনে তাঁদের অনেকে জড়োসড়ো। তাঁদের একাংশের মতে, এ বার কঠিন লড়াইয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী প্রয়োজন ছিল, যাঁকে সবাই এক ডাকে চিনবে। কিন্তু যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে তিনি উচ্চশিক্ষিত হলেও পরিচিত নন। করিমপুরে জন্ম হলেও তিনি কোনও দিন সেখানে রাজনীতি করেননি। ফলে সবটা বুঝে উঠতে বা ভোটারদের সঙ্গে পরিচিত হতে সময় লেগে যাবে।
তবে এ সব কথা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বিমলেন্দু বলেন, “আমি এক সময়ে করিমপুর বিধানসভা এলাকায় দলের পর্যবেক্ষক ছিলাম। ওখানকার সকলে আমার পরিচিত। করিমপুরের মানুষ আমাকে আশীর্বাদ করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy