কাপড়া জালের সুতোয় জড়িয়ে মাছ-হারা নদী জেলেদের ঠেলে দিয়েছে অন্য পেশায়।
সাইকেলের পেছনে বাঁধা বাসনের ঝুড়ি, গলার হাঁকে তেমন জোর নেই। রাস্তার পাশ থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ হেঁকে বললেন, ‘‘কি ব্যাপার বাপু, হকারি করছ আর গলার হাঁকে জোর নেই কেন?’’ ছিপছিপে চেহারার মদন মন্ডলের উত্তর, ‘‘কি করে আর হাঁক বেরোবে বলুন, সারাজীবন নদীতে গুনগুন করে গান গেয়ে মাছ ধরলাম। শেষ বয়সে এসে বদলে গেল পেশা। পেটের টানে বাসনের ঝুড়ি নিয়ে এখন গায়ে গায়ে ঘুরি।’’
খোঁজ নিতেই বেরিয়ে পড়ল কাহিনি। কাপড়া জালের সুতোয় জড়িয়ে মাছ-হারা নদী তাকে ঠেলে দিয়েছে অন্য পেশায়। বাসনের ঝাঁকা নামিয়ে মদন বলতে থাকে— ‘‘বাপ দাদার আমল থেকেই পদ্মা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছি আমরা। নদী থাকলেও এখন সেই নদীতে আর মাছ নেই, জাল শিকেই তুলে পথে বেরিয়েছি।’’ কেবল মদন নয়, সীমান্তের পদ্মাপাড়ের হাজার হাজার মৎস্যজীবীর হাল এখন এমনই। কেউ করছেন দিনমজুরি, কেউ আবার রাজ্য ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে। জলঙ্গির গুড়িপাড়া অধিকাংশ পরিবারই এখন ঘর ছেড়েছেন মাছ ধরার পেশা ছেড়ে অন্য কাজের খোঁজে।
যাঁরা মনের আনন্দে গান গেয়ে মাছ ধরতেন গুড়িপাড়ার সেই আনন্দ মণ্ডল এখন কেরলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। সেখান থেকে মাসে মাসে মাসে টাকা পাঠালে চলে তার সংসার। মাছ-ভাত যাঁদের প্রতি দিনের খাবার ছিল তাঁদের এখন মাসে এক দিনও পাতে মাছ ওঠে কিনা সন্দেহ। আনন্দের পরিবারের দাবি, এতদিনের পেশা ছেড়ে হঠাৎ করে কেরলে গিয়ে খুব কষ্টে আছে ছেলে। তাঁদের মনেও কোন আনন্দ নেই, গোটা মৎস্যজীবী পাড়াটাই যেন এখন কেমন থম মেরে আছে।
পদ্মা পাড়ের ভাঙনগ্রস্ত গ্রাম লালকূপের সাইদুল মোল্লা দীর্ঘ দিন সংসার চালাতেন মাছ ধরেই। সাইদুলের দাবি, ‘‘ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে পদ্মার মাছকে আঁকড়ে ধরলাম। কোনক্রমে সংসারটা চলত মাছ ধরেই, আর যাই হোক দু’বেলা মাছের ভাতের অভাব হতো না।’’ কিন্তু কাপড়া জালের জন্য পদ্মা থেকে হারিয়ে গিয়েছে মাছ। আর সেই সঙ্গে হাজার হাজার মৎস্যজীবীর পেশাটা হারিয়ে গিয়েছে। এখন দিনমজুরি করে কোনওক্রমে টেনেটুনে চলছে সংসার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy