লঙ্কার খেতে। রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ স্কুল। বাড়িতে লেই স্মার্টফোন। তাই কোনও স্কুল যদি অনলাইনে পড়াশোনা করায়ও, তার নাগাল পাচ্ছে না অনেক গরিব পরিবারের খুদেরা। ফলে বিশেষ করে গ্রাম গঞ্জের সাধারণ পরিবারের পড়ুয়াদের লেখাপড়া একেবারেই লাটে উঠেছে। এই সুযোগে খুদে পড়ুয়ারা কেউ নেমে পড়েছে আইসক্রিম বিক্রি করতে, কেউ আবার চকলেট বাদাম নিয়ে ঘুরছে পথে পথে। একেবারে সীমান্তের এলাকা রানিনগরে খুদে পড়ুয়ারা ভোরবেলা থেকে নেমে পড়ছে এলাকার মাঠে লঙ্কা তুলতে। কেজি খানেক লঙ্কা তুললেই মিলছে নগদ পাঁচ টাকা। লকডাউনের বাজারে অনেক অভিভাবকই দেখছেন অন্তত গোটা পঞ্চাশ থেকে একশো টাকা চলে আসছে ঘরে। ফলে অসহায় অনেক পরিবারই উৎসাহ দিচ্ছেন প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের লঙ্কা তোলার কাজে।
খুদে পড়ুয়াদের লঙ্কা তোলার ঘটনা সীমান্তের এই গঞ্জে নতুন নয়। এর আগেও লঙ্কার মরসুমে স্কুলছুট হতে দেখা গেছে খুদে পড়ুয়াদের। কিন্তু এ বার টানা প্রায় আট মাস স্কুল বন্ধ থাকায় এই কাজে নেমে পড়েছে তারা। তাছাড়া লকডাউনে অনেক সাধারণ পরিবারে অনটন দেখা দিয়েছে। আর অভিভাবকদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে দলে দলে শিশু-কিশোররা নেমে পড়ছে মাঠে লঙ্কা তুলতে। রানিনগরের হারু ডাঙা এলাকার চাষি সইফুদ্দিন মন্ডল বলছেন, ‘‘প্রায় বিঘা খানেক জমিতে এ বছর লঙ্কা আছে আমার। চারদিকে অতিবর্ষণে লঙ্কা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে দামও ভাল পাচ্ছি, আর এ বার লঙ্কা তোলার শ্রমিকেরও অভাব নেই। অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সকালবেলায় জমির আলে এসে দাঁড়িয়ে থাকছে লঙ্কা তোলার জন্য। পাঁচ টাকা কেজি দরে লঙ্কা তুলছে তারা। একদিকে আমাদের সুবিধা হচ্ছে, আর তারাও সকাল থেকে দশটা এগারোটা পর্যন্ত কাজ করেই পঞ্চাশ একশো টাকা আয় করছে।’’
মোহনগঞ্জের বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া বিউটি খাতুন ও পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া সোনিয়া খাতুন লঙ্কা তুলতে তুলতে জানায়, স্কুল ছুটি ফলে লেখাপড়া নেই তাদের, এই সময়ে লঙ্কা তুললে ক্ষতি কিসের। পঞ্চাশ থেকে একশ টাকা হাতে পাওয়া যাবে। কিন্তু লঙ্কা তুলতে অসুবিধা হয় না? বিউটি সোনিয়ার দাবি, ‘‘আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে, আর কোনও অসুবিধা হয় না। স্কুল চালু হলে আবার স্কুলে চলে যাব।’’
কিন্তু এভাবে শিশু শ্রমিকরা কাজ করছে প্রশাসনের কোনও নজর নেই? রানিনগর ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা বিশেষ করে এই লঙ্কার মরসুমে এলাকার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকদের সতর্ক করেন, কিন্তু এবার স্কুল বন্ধ থাকায় সেই সুযোগটা হচ্ছে না। রানিনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাহ আলম সরকার বলছেন, ‘‘একেবারেই ঠিক কাজ নয় এটা, শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া পড়ুয়াদের স্কুল বন্ধ বলে এভাবে মাঠে নামিয়ে দেওয়া একেবারেই অনুচিত। আমরা চেষ্টা করব অভিভাবকদের সচেতন করতে।’’ কিছু স্কুলের শিক্ষকেরাও জানিয়েছেন, তাঁরা জানতেন না, এমনটা হচ্ছে। খুদে পড়ুয়াদের ফেরাত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy