Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Titas Sadhu

কৃষ্ণনগরের বাড়িতে আবেগে ভেসে যা‌চ্ছেন তিতাসের দিদা

কৃষ্ণনগরেরই এক নার্সিংহোমে ২০০৪ সালে জন্ম তিতাসের। জন্মের পর বেশ কিছু দিন মায়ের সঙ্গে দিদার বাড়িতেই ছিল সে। তার পর বাবা রণদীপ সাধুর চাকরির সূত্রে তারা চলে যায় রাঁচিতে।

 তিতাসের দিদা। নিজস্ব চিত্র

তিতাসের দিদা। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য 
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩২
Share: Save:

ভারতীয় সময় বিকেল সওয়া ৫টা। রবিবার। সাউথ আফ্রিকার মাঠে অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল।

চার ওভারে মোটে ছ’রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে দুরমুশ করছে হুগলির চুঁচুড়ার মেয়ে তিতাস সাধু। আর কৃষ্ণনগরে চাষাপাড়ার বাড়িতে দোতলার ঘরে টিভির সামনে বসে আবেগে ভাসছেন ৬৮ বছরের মিতা মল্লিক। তিতাসের দিদা।

কৃষ্ণনগরেরই এক নার্সিংহোমে ২০০৪ সালে জন্ম তিতাসের। জন্মের পর বেশ কিছু দিন মায়ের সঙ্গে দিদার বাড়িতেই ছিল সে। তার পর বাবা রণদীপ সাধুর চাকরির সূত্রে তারা চলে যায় রাঁচিতে। সেখান থেকে কলকাতা।

তিতাসের মা ভ্রমর মল্লিক ছিলেন কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী। মেয়েকে গড়ে তোলার গল্পটা তাঁর কী রকম? ভ্রমরের কথায়, “কলকাতায় বাচ্চার খেলার জায়গা ছিল না। মূলত তিতাসের বাবা রণদীপের ইচ্ছাতেই আমরা চুঁচুড়ায় পৈতৃক বাড়িতে চলে যাই। সেখানেই শুরু হয় তিতাসের পড়াশোনা আর বিকালে ঠাকুরদার সঙ্গে বাড়ির পাশের মাঠে গিয়ে খেলাধুলো। খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য নয়। পড়ার সঙ্গে খেলারও সমান প্রয়োজন বলে মনে করতাম আমরা।"

প্রথম শ্রেণিতে পড়তেই তিতাসকে সাঁতারে ভর্তি করা হয়েছিল। ছোট থেকেই সে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত-আসত। সে যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তাকে মাঠে দৌড় শেখার জন্যও ভর্তি করা হয়েছিল। রণদীপও স্কুল জীবনে জাতীয় স্তরে দৌড়েছেন। চুঁচুড়ায় একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ক্লাব আছে তাঁদের। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তিতাস সময় পেলেই সেই ক্লাবে গিয়ে স্কোর লিখত।

এক ঘোর বর্ষার দিনে ক্লাবের মাঠে প্রথম বল করার সুযোগ পায় তিতাস। তখন সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স ১৩ বছর। ছেলেদের সঙ্গেই ক্রিকেট খেলতে শুরু করে সে। এর পর প্রথমে জেলা মহিলা দলে সুযোগ পায়। বাংলা অনূর্ধ্ব ১৯ দলে প্রথম বার সে নির্বাচিত হয়নি। পরের বছর, ২০২০ সালে তার সিবিএসই পরীক্ষা থাকায় সে বারও হয়নি।

এর পর তিতাস বাংলা অনূর্ধ্ব ১৯ ও সিনিয়র দলে খেলার সুযোগ পায়। গত বছর নভেম্বরে জাতীয় দলে খেলার জন্যে নির্বাচিত হয় সে।

মিতার কথয়, “আমার নাতনি শান্ত স্বভাবের এবং বরাবরই অন্য মেয়েদের থেকে একটু আলাদা। পুতুল খেলা বা সাজগোজ করার ব্যাপারে কোনও দিন তার উৎসাহ দেখিনি।” আর খাবারের প্রতি টান? দিদা বলেন, “ছোটবেলায় ও চাইনিজ় খেতে খুব ভালোবাসত। পরে খেলার জন্য অনেক পছন্দের খাবারই খেতে চায় না।”

খেলায় তুখো়ড়। তবে পড়াতেও মন্দ ছিল না তিতাস। মিতা জানান, সিবিএসই পরীক্ষায় ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়ে সে পাশ করেছে। কিন্তু তার খেলার চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। পড়া ও খেলা একই সঙ্গে সামলানো সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ২০২২ সালে আর আইএসসি দেওয়া হয়নি তিতাসের।

ভ্রমর বলে, “এগারো ক্লাস পাশের পর মেয়ে দুটো বছর সময় চায় খেলে নিজেকে প্রমাণ করার জন্যে। আমরা ওকে খেলতে বলি।”

ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় তিতাস রবিবার রাতে মাকে ফোন করে বলেছে, এখন তারা দলের সবাই মিলে চুটিয়ে আনন্দ করতে চায়। ভ্রমর বলেন, “তিতাস সব সময়ে বলত, খেলাধুলোয় মেয়েদের ভবিষ্যৎ আছে। কিন্তু সেটা মন দিয়ে করতে হবে আর লেগে থাকতে হবে। লেগে থাকলে মেয়েরা পারে না, এমন কাজ নেই।”

আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটের কিংবদন্তী ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ ঝুলন গোস্বামী নদিয়ারই মেয়ে। এ বার লাল বল হাতে উঠে আসছে তিতাস।

ক্রিকেট-ললনাদের সঙ্গে নদিয়ার বুঝি নাড়ির টান!

অন্য বিষয়গুলি:

Titas Sadhu U19 World Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE