পঞ্চমীতে পড়ে অসমাপ্ত মণ্ডপ এবং মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র।
ইচ্ছা ছিল বিশ্বের সব চেয়ে বড় দুর্গাপ্রতিমা গড়ে তাক লাগানো। লক্ষ্য ছিল ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ নাম লেখানো। কিন্তু আইনি জটিলতায় অসমাপ্তই থেকে গেল সেই কাজ। নদিয়ার রানাঘাটের কামালপুরের ‘অভিযান সংঘ’-এর অসমাপ্ত মূর্তির মুখে দেখা গেল কালো কাপড় বাঁধা। উৎসবের চার দিন অসমাপ্ত মণ্ডপের চার দিকে কালো কাপড় দিয়ে ঘিরে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এটা তাঁদের ‘প্রতীকী উৎসব’ এবং প্রতিবাদও।
কামালপুরের ধানতলা এলাকায় যেখানে ১১২ ফুটের দুর্গা তৈরির কথা ছিল, মঙ্গলবার, পঞ্চমীর সন্ধ্যায় দেখা গেল সেখানে আকাশছোঁয়া বাঁশের কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাশেই আছে অসমাপ্ত দুর্গা মূর্তি। সাদা-সোনালি রং করা সেই মূর্তির মাথায় একটি মুকুট। আর মূর্তির মুখের দিকটা সরু কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। অসমাপ্ত মণ্ডপের যত্রতত্র বাঁধা হয়েছে কালো কাপড়। উদ্যোক্তাদের দাবি, পুজো বন্ধের নির্দেশের পর গ্রাম জুড়েই ‘শোকের আবহ।’ তাই সম্পূর্ণ না হওয়া প্রতিমাকে সামনে রেখে প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা। উৎসবের চার দিন ওই মাঠে নিজেদের মতো করে ‘প্রতিবাদের উৎসব’-এ শামিল হবেন। চার দিন খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে। সবাই মিলে তাতে অংশ নেবেন। শুধু পুজোটা হচ্ছে না।
ক্লাবের তরফে জানানো হল, প্রতিমার প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ-ই শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ফেলেছিল তারা। ‘বিশ্বরেকর্ড’ হবে, সেই আশায় গ্রামের চাষিরা তাঁদের প্রায় ৪০ বিঘা জমি চাষ না করে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না পেয়ে সব বিশ বাঁও জলে। অভিযান সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা মিনতি সরকার বলেন, ‘‘খুঁটিপুজোর মধ্যে দিয়ে মাকে আবাহন করা হয়েছে। এখন অসমাপ্ত প্রতিমাতেই আমরা প্রতীকী পুজো করব। চার দিন এখানেই বসে থেকে আমরা অবস্থান বিক্ষোভ করব। সারা বিশ্ব দেখুক, আমাদের দুর্গাপুজো কী ভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে।’’ পুজো কমিটির সদস্য সুজয় বিশ্বাসের মন্তব্য, ‘‘গ্রামবাসীরা মিলে নতুন কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম। তাঁরাই এই পুজোর টাকা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। তাই পুজো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গ্রামবাসীরাই কালো কাপড়ে মুড়ে দিয়েছেন মণ্ডপের চারপাশ। মায়ের মুখেও প্রতিবাদের চিহ্ন হিসাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে কালো কাপড়।’’ সুজয়ের সংযোজন, ‘‘পুজো করতে পারিনি ঠিকই, তবে প্রতিবাদ পৌঁছে দেব সারা বিশ্বে।’’
উল্লেখ্য, ১১২ ফুটের প্রতিমা তৈরির অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন পুজো উদ্যোক্তারা। কয়েক বছর আগে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের ঘটনার উদাহরণ টেনে রাজ্য আদালতে জানায় কেন অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে হাই কোর্ট অনুমোদনের বিষয়টি জেলাশাসকের উপর ছেড়ে দেন। আইনশৃঙ্খলার প্রসঙ্গ টেনে অনুমতি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে জেলা প্রশাসন। ক্লাব কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রশাসনিক অসহযোগিতাতেই তাঁদের উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy