পানায় হারিয়েছে ইছামতী। নিজস্ব চিত্র
ইছামতী নদীর ধারে দাঁড়িয়ে কথাগুলি বলতে-বলতে স্মৃতিভারে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিলেন বছর বাষট্টির জ্যোতির্ময় সরস্বতী। “কি ছিল সে দিনের ইছামতী! জল থইথই করত। নৌকায় কত মানুষ যাতায়াত করতেন! বড়-বড় পালতোলা নৌকায় মালপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেত। আজ সে সব গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।”
একটু থেমে প্রৌঢ়ার মন্তব্য, ‘‘দুঃখ হয় নদীর বর্তমান পরিস্থিতি দেখে। যে দিকে তাকাই সে দিকেই কচুরিপানা। দু-চারটি জায়গায় সামান্য জল। কোথাও কোথাও আবার নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। হারানো নদী ফিরে পাব কী করে?’’
রবিবার চাকদহের দিনবন্ধু মঞ্চে নদী নিয়ে আলোচনাচক্রে মূল বিষয় ছিল, ইছামতীর ক্রমশ মজে যাওয়া। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদেরা। পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটি আয়োজিত এই আলোচনাসভায় জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু, প্রাক্তন সভাধিপতি বানী কুমার রায়, রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডল, চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হরপ্রাসাদ হালদার প্রমুখ। প্রত্যেকেই অবিলম্বে ইছামতী নদীর সার্বিক সংস্কারে জোর দিয়েছেন।
অতীতে ইছামতী নদীর দু’ধারে কয়েক হাজার মৎসজীবী বসবাস করতেন। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা এই নদী থেকে মাছ ধরে জীবন অতিবাহিত করেছেন। সন্তান প্রতিপালন করেছেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। নদীর ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসায় তাঁরাও সঙ্কটে। অনেকেই মৎস্যজীবীর পেশা থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। দু-চার জন অন্য জায়গা থেকে মাছ কিনে এনে বিক্রি করেন।
জেল সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডুর কথায়, “এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের একটা দফতর রয়েছে। তাদের কাছে আমাদের সামসদের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো উচিত। নদী সংস্কার না-হওয়ায় বহু মৎস্যজীবী জীবীকা হারিয়েছেন। তাঁদের কথা ভেবে এই নদীকে বাঁচাতে হবে। যাঁরা এটা নিয়ে লড়াই করছেন আমরা ও আমাদের সরকার তাঁদের সঙ্গে রয়েছে।” প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি বানী রায় বলেন, “এ জন্য নদীর পাড়ের মানুষকেও সচেতন করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রচেষ্টায় ইছামতী নদী সংস্কার করতে হবে।” সাংসদ তাপস মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘ইছামতীর নাব্যতা বাড়াতেই হবে। বিষয়টি এর আগেও সংসদে তুলেছিলাম। আবার তুলব।”
সভায় চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি বিবর্তন ভট্টাচার্য জানান, ভারত এবং বাংলাদেশ মিলিয়ে ২৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ইছামতী নদী। মাজদিয়ার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে এর শুরু। আগে এক বার ২৫ কোটি টাকা খরচ করে নদীর ২১ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা হয়েছিল। তাতে কার্যত কোনও কাজ হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘মাজদিয়ায় নদীর উৎসমুখে সংস্কার করতে হবে। নদীর কচুরিপানা এবং আশপাশের জঙ্গল সাফ করতে হবে। নদী দখলমুক্ত করতে হবে। ড্রেজিং করতে হবে। নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার ইছামতীর দুই ধারে প্রায় সাত হাজার মৎসজীবীকে রক্ষা করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy